ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে তার মাধ্যমে একাধিক
নারীর সর্বনাশ করেছেন মো. মনির হোসাইন (৩৫) নামের এক যুবক। গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা প্রায়
২৭ হাজার। সেটির অ্যাডমিন মনির। পেশায় তিনি একটি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হলেও আড়ালে
একজন ভয়ংকর অপরাধী। গ্রেফতারের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)
এমন তথ্য জানায়।
এর আগে, রবিবার রাতে রাজধানীর রামপুরা
এলাকা থেকে মনির হোসাইনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক
ম্যানেজমেন্টের একটি টিম। এ সময় তার কাছ থেকে একাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের
ভিডিও ও ছবিসহ দু’টি মোবাইল, তিনটি সিম কার্ড, দু’টি মেমোরি কার্ড
এবং দু’টি গোপন ক্যামেরা
জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন<< ডিআইজি মিজানসহ চারজনের মামলার রায় একুশে জুন
গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিআইডির
গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান। তিনি জানান, সাইবার পুলিশ সিআইডির
কাছে একটি অভিযোগ আসে ফেসবুক গ্রুপের এক নারী সদস্যকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন
করা হচ্ছে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রথমে ওই নারীকে
গ্রুপের সদস্য করে এবং পরে মডারেটর বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাকে গ্রুপে আরো নানাবিধ
সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখান অ্যাডমিন মনির। বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ঘুরে বেড়ান
এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। এক পর্যায়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের দৃশ্য ভিডিও করে
রাখেন তিনি।
পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে
দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন মনির। গ্রুপের একাধিক নারীর সঙ্গে এমন আচারণ করেছেন
অ্যাডমিন মনির। তাদের ছবি ও ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। মনিরের এসব কর্মকাণ্ড
চলত রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় তার গোপন ‘হেরেমখানায়’। সিআইডি জানায়,
বাইরে বাঁশের বেড়া টিনের ঘর- দেখলে চোখে পড়ার মতো তেমন কিছু নয়। কিন্তু ভেতরে এসি রুম,
উন্নত শয়নকক্ষ, অ্যাটাচ বাথ, ইয়াবা সেবনের ব্যবস্থা। মৌজ-মাস্তি করার সকল উপকরণ মজুদ
সেখানে। ওই হেরেমখানায় ছিল একাধিক গোপন ক্যামেরাও। ওই ক্যামেরায় তার অনৈতিক কাজের সব
কর্মকাণ্ড রেকর্ড করে রাখতেন মনির।
আরও পড়ুন<< আ.লীগ নেতা টিপু-প্রীতি হত্যা : ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
তদন্তে পাওয়া যায়, গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে
মনির অভিযোগকারী নারীসহ একাধিক নারীর সাথে গ্রুপের মডারেটর বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে
প্রথমে ভিডিও কলে কথা বলে তা স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখতেন। পরে সেই ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল
করতেন। শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ভিডিও করে রাখেন মনির। অভিযোগকারীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের
অভিযোগও পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী অফিসে চলে গেলে কখনো কখনো তিনি ভিকটিমের
বাড়িতে গিয়ে হানা দিতেন। তার অত্যাচারে ওই নারীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে এবং আইনগত ব্যবস্থা
গ্রহণে বাধ্য হন।
তদন্তে আরো জানা যায়, বিভিন্ন নারীকে নিজের
কবজায় নিয়ে টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্য লোকদের কাছে পাঠাতেন মনির। ভুক্তভোগী নারীরা সামান্য
টাকা পেলেও মনির ভাগ পেতেন মোটা অঙ্কের টাকা। গ্রেফতারের পর মনিরের বিরুদ্ধে ডিএমপির
রূপনগর থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।