সদরপুর(ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সদরপুর-চরভদ্রাসন উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা পদ্মা নদীর আকোটেরচর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাট দিয়ে বিধি নিষেধ অমান্য করে স্পিড বোটে নিয়মিত পদ্মা নদী পারাপার করা হচ্ছে ঢাকাগামী যাত্রীদের।
এ আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাটটির অবস্থান জেলার সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে। উক্ত ঘাট থেকে মাত্র এক কি.মি. উত্তর দিকে পদ্মা নদীর জল সীমানায় রয়েছে চরভদ্রাসন উপজেলার গোপালপুর-মৈনট আন্তঃ জেলা ঘাটের অবস্থান।
বিধিমতে, শুধুমাত্র আন্তঃজেলা ঘাট দিয়েই বিভিন্ন জেলার যাত্রী পারাপার করা বৈধ। আর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাটগুলো তাদের নিজস্ব চৌহদ্দীর মধ্যে থেকে নৌযান চলাচল করতে পারবে।
কিন্তু পদ্মা নদীর আকোটেরচর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাট ইজারাদার স্বপন পাটনীর পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী শাহীন আনোয়ার ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাটটি ইজারা নিয়ে ঘাটের চৌহদ্দী সীমানা অতিক্রম করে ঢাকা জেলাধীন দোহার উপজেলার বিলাশপুর-আকোটেরচর ঘাট হয়ে অবৈধভাবে ঢাকাগামী যাত্রীদের স্পিডবোটে পারাপার করে চলেছেন।
উক্ত ঘাট মালিকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে পার্শ্ববর্তী চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর-মৈনট আন্তঃজেলা ঘাটটি চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একই সাথে উপজেলার গোপালপুর-মৈনট আন্তঃজেলা ঘাটের অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এবং ভবিষ্যতে সরকার এ ঘাট থেকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাতে পারে বলেও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আকোটেরচর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাট থেকে আন্তঃজেলা ঘাটের চলমান কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ন অবৈধ উল্লেখ করে বার বার অফিসিয়াল চিঠি ইস্যু করলেও বাস্তবে স্থানীয় প্রশাসন কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেয়নি বলে গোপালপুর-মৈনট ঘাট মালিক কর্তৃপক্ষ হতাশা ব্যাক্ত করেছেন।
এদিকে, গত একমাস যাবৎ সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাত দিয়ে আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট দিয়ে আন্তঃজেলা ঘাটের যে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। একই সাথে আকোটেরচর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাট মালিক কর্তৃপক্ষ উক্ত ঘাট দিয়ে খুব সহজে এবং কম খরচে ঢাকা যাতায়াতের সুখবর উল্লেখ করে এলাকা জুড়ে আরেকটি মাইকিং করে চলেছেন। দিনরাত এ দুই ধরনের মাইকিং শুনে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সম্প্রতি আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট থেকে দোহার উপজেলার বিলাশপুর ঘাট দিয়ে লঞ্চ/স্পিড বোটে যাত্রী পারাপার সম্পূর্ণ অবৈধ এবং তা স্থায়ী বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ সদরপুর, চরভদ্রাসন ও দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বরাবর ০৫.৪১.৩০০০.০০৯.০৬.০০৫. ২১-৬৯ (সং) এবং ০৫.৪১.৩০০০.০০৯.০৬.০০৫. ২১-৭৭ (সং) নং স্মারকে দু’টি পত্র দিয়েছেন।
একই সাথে উক্ত ইউনিয়ন ঘাট থেকে দোহার উপজেলার বিলাশপুর ঘাট দিয়ে লঞ্চ/স্পিড বোটে যাত্রী পারাপার সম্পূর্ণ অবৈধ বলে উল্লেখ করে এবং ভবিষ্যতে ইজারাদার চুক্তি ভঙ্গ করলে উক্ত ইউনিয়ন ঘাটটি বাতিল করার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৩ মার্চ ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ডিও লেটার ইস্যু করেছেন। এরপরও আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট থেকে বহাল তবিয়তে অবৈধ উপায়ে নিয়মিত আন্তঃজেলা ঘাটের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে আকোটেরচর আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঘাটের আগের অবস্থান থেকে সরিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে কলাবাগানের ঝোপের মধ্যে নতুন করে ঘাট বসানো হয়েছে। চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামে পদ্মা পারের বিশাল কলাবাগানের মধ্যে দিয়ে অটোবাইক, রিক্সা ও ভ্যান চলাচলের জন্য পথ তৈরী করা হয়েছে।
উক্ত কলা বাগানের মধ্যে আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাটের ব্যানার ও সাইনবোর্ট টাঙিয়ে পদ্মা পারে বাঁশের মাচাল বেধে তৈরী করা হয়েছে স্পিডবোট ঘাট। এ ঘাট দিয়ে নিয়মিত ঢাকার যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন। উক্ত ঘাটে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে চলমান স্পিডবোটগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট ইজারাদার স্বপন পাটনীর পক্ষে শাহীন আনোয়ার জানান, আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাটটি এ বছর আমি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি এবং ইজারামূল্য পরিশোধ করেছি। কিন্তু প্রশাসন আমাকে ঘাট বুঝিয়ে দেয় নাই।
তিনি আরও জানান, এ ঘাট থেকে পদ্মার অপর পারের দোহার উপজেলার বিলাশপুর ঘাটের মাধ্যমে স্পিডবোটে নিয়মিত আমি ঢাকার যাত্রীদের পারাপার করে চলেছি। এ সময় ঘাট পরিচালনা বিধি নিষেধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মনগড়া বিধি উল্লেখ করে জানান, আন্তঃ ইউনিয়ন ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে দেশের যেকোনো প্রান্তে যাওয়া যাবে কিন্তু যাত্রী আনা যাবে না।
ঘাটের আরেক অংশীদার শেখ সামাদ বলেন, যেহেতু সরকার নাম দিয়েছে আকোটেরচর লঞ্চ ঘাট, তাই লঞ্চতো পানির উপর দিয়েই চলবে, স্থলেতো আর লঞ্চ চলবে না।
উক্ত ঘাটের পার্শ্ববতী গোপালপুর-মৈনট আন্তঃজেলা ঘাট মালিক আবুল কাশেম খান জানান, এ বছর আমরা ৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ইজারা মূল্যে এ ঘাট নিয়েছি। আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট মালিক শাহীন আনোয়ার আমাদের সাথে দ্বন্দ্ব করে এ বৈধ ঘাটের ক্ষতি করার জন্য পার্শ্ববর্তী আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট দিয়ে ঢাকার যাত্রীদের স্পিডবোটে পারাপার করে চলেছেন।
তিনি আরো জানান, উক্ত ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ২/৩শ’ যাত্রী অবৈধভাবে পারাপার হচ্ছে। বার বার প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও আমরা কোনো ফল পাচ্ছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে এতো টাকা দিয়ে এ ঘাট আর কেউ নিবে না।
এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তারেক মাহমুদ বলেন, আকোটেরচর ইউনিয়ন ঘাট দিয়ে অবৈধ উপায়ে আন্তঃজেলা ঘাটের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে বেশ কিছু দিন যাবৎ আমি অভিযোগ শুনছি। কিন্তু সময়ের অভাবে উক্ত ঘাটে যাওয়া হয় নাই এবং বিষয়টি দেখার জন্য অফিসের কাউকেই পাঠাতেও পারি নাই।
তিনি আরও বলেন, আসলে ওই ঘাটে মোবাইল কোর্ট করার মত পরিস্থিতি নাই, তবে তদন্ত করে আমরা ঘাটটি বাতিল করে দিতে পারবো।