আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ জনপদ থেকে শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পগুলো বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় প্লাষ্টিক পণ্য বাজার দখল করায় বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর কমে গেছে। ফলে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে গ্রামীণ এই কুটির শিল্পটি। প্রয়োজনীয় পুঁজি, বাজারজাতকরণ ও পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে পটুয়াখালীর বাউফলে কুটির শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে।
উপজেলার গুটি কয়েক পরিবারের কিছু মানুষ আঁকড়ে রেখেছে এই শিল্পকে। কিন্তু দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পন্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী ন্যায্যমূল্য না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা আজ পেশা পাল্টাতে শুরু করেছেন।
জানা যায়, বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। বাড়ির পাশের ঝাঁর থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে তৈরি করতেন হরেক রকমের পণ্য। এসব নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি, বাজারে বিক্রি করে চলতো তাদের জীবন-যাপন।
আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে আর প্লাস্টিকের তৈরী বিভিন্ন রং বেরঙের এর আর্কষনীয় ডিজাইনের দ্রব্য সামগ্রী বের হাওয়ায় এখন আর কেউ বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার করেনা। এক দিকে যেমন ব্যবহারকারীর অভাব, অন্যদিকে বাঁশের স্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ বাঁশ শিল্পীরা তাদের পৈত্রিক পেশা ছড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাছেন। হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পী অনেকটা নিরুপায় হয়ে এ পেশায় টিকে থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয় যাছেন। এককালে কুলা, খাঁচা, চালনি, চাটাই, ডোল, ঝুড়ি, ডালা, ওর, প্রভৃতি বাঁশজাত পণ্যর বাউফল উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাপক চাহিদা ছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে এ শিল্প বিরাজ করছে চরম মন্দা। ফলে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল লোকজন বেকার হয়ে মানবতর জীবনযাপন করছে।
কুটির শিল্পের সাথে জড়িতরা জানান, আমরা কুটির শিল্পের কাজ করতে একটা বাঁশ কিনতে হয় একশ টাকা দিয়া। বাজারে গেলে সেই দাম পাইনা। আগের মত হাজি ঢালা চলেনা, আমাগো সংসার চলেনা কষ্ট হয়। তারপরেও আমরা কুটির শিল্প টিকিয়ে রাখছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন কুটির শিল্পের যে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র রয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। কুটির শিল্পে অনেকই কাজ করে তাদের অনেকের লোনের সমস্যা, ক্যাশের সমস্যা আমরা উপজেলা প্রশাসনে একটি প্রকল্প নিয়েছি তাদের প্রশিক্ষন দিবো এবং তাদের লোনের ব্যবস্থা করব ।
সচেতন মহলের দাবী, কুটির শিল্পকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা করা দরকার। এ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটা বড় অংশ। তাই এ পেশার সঙ্গে যারা এখনো জড়িত রয়েছেন তাদের পরিবারে ভিত্তিকে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের পেশার উন্নয়নে সরকারের সহায়তা করা উচিত।