নিয়োগ পরীক্ষার
প্রশ্ন ফাঁসের অডিও ভাইরাল কাণ্ডে অবশেষে নরসিংদীর পলাশের ইছাখালী ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার
সমালোচিত সেই অধ্যক্ষ আ.ক.ম. রেজাউল করিমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শনিবার (১৮মে) জেলা প্রশাসন নরসিংদীর
চিঠির আলোকে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের মিটিংয়ের সিদ্ধান্তে তাকে বরখাস্ত করা হয়। সেই সাথে বিতর্কিত পরীক্ষার নিয়োগ প্রাপ্তদের
নিয়োগ স্থগিত করা হয়। পদমর্যাদার ভিত্তিতে অত্র মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল আমজাদ
হোসেনকে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব
দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন অত্র মাদ্রাসার সভাপতি আল- মুজাহিদ হোসেন তুষার।
গভনিং বোর্ডের
একাধিক সদস্য জানান, আগের সভাপতি পদত্যাগ করায় এতো দিন এ বিষয়ে
সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। আজকের সভায়
জেলা প্রশাসনের চিঠির আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে
অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে বিতর্কিত পরীক্ষার নিয়োগ প্রাপ্তদের নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।
মাদ্রাসার সভাপতি
ও ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র আল মুজাহিদ হোসেন তুষার জানান, জেলা প্রশাসনের চিঠির আলোকে
সর্বসম্মতিক্রমে আজকের সভায় অধ্যক্ষকে বরখাস্ত
করা হয়েছে। সেই সাথে বিতর্কিত পরীক্ষার নিয়োগ
প্রাপ্তদের নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের
চিঠির আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অত্র মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ সকল সদস্যবৃন্দের
প্রতি শিক্ষক -শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সচেতন
মহল সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ খবর এলাকায়
ছড়িয়ে পড়লে উৎসক জনতা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ
করেন।
এর আগে গত ১৩,
১৪ ও ১৫ মে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে
আড়াই মাসেও স্ব-পদে বহাল অভিযুক্ত অধ্যক্ষ শিরোনামে দেশের একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমে
সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে বিতর্কিত পরীক্ষার নিয়োগপ্রাপ্তরা মাদ্রাসায় যোগদান করে নিয়মিত
চাকরি ও করছেন। প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে ব্যবস্থা
নিতে আড়াই মাসে ও জেলা প্রশাসনের চিঠি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যর নির্দেশনা কার্যকর হয়নি তা সংবাদে তুলে ধরা হয়। আর এসব বিষয়ে
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সদস্যবৃন্দের
কার্যকরী ভূমিকা কি তা জানতে চাওয়া হয়।
এর আগে, গত
২৯ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ আ. ক. ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নিয়োগ পরিক্ষার প্রশ্ন ফাঁস
ঘটনার ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন সভাপতি সরকার কাউছার আহম্মদকে জেলা প্রশাসন নরসিংদী থেকে একটি
চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিতে অধ্যক্ষ আ.ক. ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক
অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, নিয়োগ প্রার্থীদের
চাকরি প্রধানের প্রলোভন দেখিয়ে আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত
হয়েছে। যা প্রকাশিত অডিও ক্লিপের কথোপথনের
মাধ্যমে সু-স্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান।
এরপর পর সভাপতি সরকার কাউসার আহমেদ পদত্যাগ
করায় গত ১২ মে নতুন সভাপতি আল মুজাহিদ হোসেন তুষারকে এ বিষয়ে
ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন নরসিংদী থেকে আর ও একটি চিঠি ইস্যু করা হয়।
উল্লেখ, গত
১৪ ডিসেম্বর তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে ইবতেদায়ী শাখার প্রধান, কম্পিউটার অপারেটর ও ল্যাব সহকারী পদের জন্য আবেদন
চাওয়া হয়।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি
নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন বিকেলে কম্পিউটার অপারেটর পদে পলাশ উপজেলার তানভীর
আহমেদ ও ল্যাব সহকারী পদে শিবপুর সাধারচর এলাকার ইতি আক্তারকে নির্বাচিত করা হয়।
এরপর, সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে, নিয়োগ পরীক্ষার অন্য আবেদনকারীর সঙ্গে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের ফোনে প্রশ্ন
ফাঁস সংক্রান্ত কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়
ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হলে সুষ্ঠু তদন্তের
মাধ্যমে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়।