পৃথিবীর বাকি অংশে আর বুকভরে শ্বাস নেওয়ার
উপায় নেই। বাতাসে মিশে আছে বিষ, রোজ ধুলো-ধোঁয়ায় ভরা সেই হাওয়া একটু একটু করে প্রবেশ
করছে ফুসফুসে। অসুখ দানা বাঁধছে গোপনে। প্রতিদিন এই বিষাক্ত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে নিতে
ক্লান্ত মানুষ এমন জায়গা খোঁজেন, যেখানে মিলবে নির্মল বাতাস। যন্ত্রসভ্যতার ধুলো নেই,
গাড়ির ধোঁয়া নেই, নেই দূষণ। তেমন জায়গা কি আছে এখনো পুথিবীতে? হ্যাঁ আছে!
কোথায় সেই এই জায়গা? বিবিসির খবর অনুযায়ী,
জায়গাটি অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি উপদ্বীপ।
নাম কেপ গ্রিম।
বিশুদ্ধ বাতাসের উপস্থিতির কারণে এই নির্জন
জায়গাটি ক্রমশ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কেপ গ্রিম ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত’ হিসেবে পরিচিত।
মানুষের বাসস্থান থেকে জায়গাটি এতটাই দূরে যে, সেখানে গিয়ে পৌঁছানোই কঠিন।
বায়ুর গুণগত মান পরিমাপ করে এমন একটি সংস্থার
রিপোর্টে দেখা গেছে, এই জায়গাতেই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষণমুক্ত বাতাস।
কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল
রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ড. অ্যান স্ট্যাভার্ট জানিয়েছেন,
কেপ গ্রিম এয়ার মনিটরিং স্টেশনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পশ্চিমা হাওয়া বরফে ঢাকা দক্ষিণ
মহাসাগরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। সে কারণেই
এখানকার বায়ু বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার।
এলাকাটি তীব্র হাওয়ার জন্য বিখ্যাত। সেখানে
কখনো কখনো ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়। সেই বাতাস মূলত অ্যান্টার্কটিকা
থেকে আসা পুরোপুরি দূষণমুক্ত বায়ু।
অ্যান স্ট্যাভার্ট জানিয়েছেন, বাতাসের
গতি ও বাতাসের দিকনির্দেশের তথ্য ব্যবহার করে জানা গেছে, কেপ গ্রিমের অন্তত ৩০ শতাংশ
বাতাসকে বিজ্ঞানীরা ‘বেজলাইন’ বলে বিবেচনা
করেন। অর্থাৎ, স্থানীয় বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানগুলোর প্রভাব পড়ে না এই বায়ুতে।
কেপ গ্রিম বাদ দিলে হাওয়াইয়ের মৌনা লোয়া
স্টেশন, ম্যাককুয়ারি দ্বীপ, অ্যান্টার্কটিকার কেসি স্টেশন এবং এনওয়াই-আলেসুন্ডের সালবার্ড
শহরের বায়ুও অত্যন্ত পরিশুদ্ধ।
যারা কেপ গ্রিমে যেতে পারেন, তাদের কথা
আলাদা। কিন্তু যারা পারছেন না? উন্মুক্ত পরিবেশে নির্মল বাতাসে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার
সুযোগ কি তারা পাবেন না?
হ্যাঁ পাবেন! তাদের সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন
তাসমানিয়ার ব্যবসায়ীরা। তারা বোতলে ভরে কেপ গ্রিমের বিশুদ্ধ শীতল বায়ু বিক্রি করছেন
বহির্বিশ্বের মানুষের কাছে। দূষিত বায়ুতে বুক বিষিয়ে ওঠা মানুষজন দিব্যি টাকা দিয়ে
সেই বাতাস কিনছেন। একেকটি বোতলে থাকা বায়ুতে প্রায় ১৩০ বার শ্বাস নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে
বিবিসি।