‘মৌমাছি মৌমাছি ,কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই,ওই ফুল ফোটে বনে,যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই।’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের এই কবিতার মত ঢাকার ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের দেউলি গ্রামে মৌমাছিরা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ধনিয়া ক্ষেতের ধনিয়া ফুল থেকে মধু আহরণে।
ধনিয়া ক্ষেতের সুগন্ধি ও ফুলের অপরূপ দৃশ্য যেন মনমুগ্ধকর । এই সুযোগে ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছির বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌয়ালরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
ধনিয়া ফুলের মধুর বৈশিষ্ট এটা সংগ্রহের পর দেখতে সাদা পানির কালার মত দেখায়, এটা সংগ্রহ করা হয় সাধারণত জানুয়ারী মাসের শেষে থেকে ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে তবে সময়ের কম বেশি হতে পারে। এই মধুটি অন্যান্য মধুর মত কালার ও স্বাদের পরিবর্তন হয় দীর্ঘ সময় পার হওয়া পর। ধনিয়া ফুলের মধুর প্রধান বৈশিষ্ট এটা সরিষা ফুলের মত জমে বা বসে যায়। এই মধুটি আমাদের দেশে উৎপাদন পরিমান খুবই সীমিত।
চাষীরা সাধারণত পছন্দের একটি ধনিয়া ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষীরা। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব।
ময়মনসিংহ থেকে আসা মৌ-চাষী জিহাদ বলেন, ধনিয়া ক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহের জন্য ২৬টি বাক্স বসানো হয়েছে।ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে ধনিয়া ফুলের ক্ষেতে । তবে আবহাওয়া কিছুটা খারাপ হওয়ার কারণে মধু কম সংগ্রহ হয়েছে।
ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান জানান, ধনিয়া ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে ফলন বেড়ে যায় ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ীরা যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় ফলনও বাড়ছে।