সুস্বাদু লিচুর জন্য দেশের বাজারে ঈশ্বরদীর নাম স্বর্ণাক্ষরে খচিত আছে। লিচুর এই খ্যাতির জন্য ঈশ্বরদীর মৌসুমী লিচু চাষিরা এই সময়টাতে তাদের সমস্ত সময় পার করেন লিচুকে কেন্দ্র করে। বছরের এই সময়টাতে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা করেন স্থানীয় লিচু চাষীরা। কিন্তু এবারের বৈরী আবহাওয়া আর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তাদের অসহযোগীতায় কয়েক কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন চাষীরা।
প্রচন্ড রোদে গরমে অকালেই লালচে রং ধরে পাকতে শুরু করেছে লিচু। পঁচন ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে বিপুল পরিমাণ টাকার ক্ষয় ক্ষতির শিকার হবেন ঈশ্বরদীর লিচুর বাগান মালিক, চাষীসহ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাই প্রত্যেকেই এখন প্রায় লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে লোকসান আতংকে ভূগছেন। অধিক লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতে মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা নির্ধারিত সময়ের অন্তত দুই সপ্তাহ আগেই অকাল পক্ক (রোদে পুড়ে) লালচে রং ধরা লিচুগুলোকে গাছ থেকে পেরে দেশের বাজারে ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা শুরু করেছেন।
গত কয়েকদিন উপজেলার সাহাপুর, সলিমপুর, লক্ষীকুন্ডা, পাকশী ইউনিয়নের বিভিন্ন লিচু বাগান সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ লিচু বাগানেই মোজাফফর (স্থানীয় নাম আটি লিচুর) লিচু প্রচন্ড রোদে পুড়ে লালচে রং ধারণ করেছে। কিন্তু লিচু পঁচে ফেটে যাচ্ছে কি কারণে যানেন না চাষীরা। তবে লিচু ফেটে পঁচে যাওয়ায় চাষীরা দায়ী করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের।
চাষীরা বলেন, আমারা লিচু চাষ করি কিন্তু এভাবে লিচু ফাঁটতে কোনদিন দেখিনি। লিচুর এই অবস্থার জন্য আমাদের করনীয় সম্পর্কে জানতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অফিসে নিয়মিত ধরনা দিয়েও কোন প্রকার সহযোগীতা পাইনি। এমনকি কোন দরকারেও যদি কৃষি অফিসে যায় তাদের দেখা মেলেনা। কৃষি অফিসের অব্যবস্থাপনায় কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল হচ্ছেনা কৃষকরা। কৃষির উপর নির্ভর না হয়ে অন্য পেশায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে অনেকেই।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে মুলত দুই জাতের লিচু চাষ হয়। মোজাফফর (আটি) ও বোম্বাই। এবার ঈশ্বরদীতে লিচু হাজার ১শ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। মোট গাছের সংখ্যা রয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার টি। এরমধ্যে ৭৫ শতাংশ জমিতে জাত বোম্বাই এবং ২৫ শতাংশ জমিতে জাত মোজাফফর (আটি) লিচুর গাছ রয়েছে। তবে অধিকাংশ গাছেই এবার মুকুল আসেনি।
বক্তারপুরের লিচু চাষী রিপন পুন্ডিত জানান, গরম আর রোদে নির্ধারিত দিনের কমপক্ষে ১৫ দিন আগেই আটির লিচু গাছ থেকে ভাঙ্গা হচ্ছে। এই লিচু চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে ভাঙ্গার উপযুক্ত সময়। কিন্তু রোদে পুড়ে ফেটে পঁচে যাওয়ায় দানা পরিপুষ্ট না হলেও ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
লিচু চাষী ইমদাদুল মালিথা বলেন, এবার আমার বাগানে লিচুর সংখ্যা অনেকটাই কম, তারপরেও গাছে যে লিচু আছে ফেঁটে যাচ্ছে। আর কেনোইবা ফাঁটছে লিচু আমার জানা নেই। আমি লিচু চাষী হলেও কোন কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতা বা পরামর্শ পায়নি।
সাদ্দাম আলী নামের আরেক চাষী বলেন, আমার তিনটি লিচু বাগান আছে। গাছের লিচু হঠাৎ করেই ফেঁটে ও ঝরে পড়ছে। এসব নিয়ে আমি অনেক চিন্তাই আছি। এমন অবস্থায় উপজেলা কৃষি অফিসারদের পক্ষথেকে কোন সেবা আমরা পাইনি।
লিচু চাষী ওলি ও মুনছুর মালিথা বলেন, আমরা ছোট থেকেই লিচু চাষ করে আসছি, এবার যেভাবে লিচু ফেটেছে তাতে আমাদের লোকসান হবে। লিচু ফেটে ঝরে যাচ্ছে, পচে যাচ্ছে এতে কৃষি অধিদপ্তর থেকে আমরা এখনো কোন পরামর্শ পায়নি ও কৃষি অফিসারদের দেখাও যায়নি।
মুনছুর আরো বলেন, প্রতিটা ইউনিয়নে কৃষি অফিসাররা থাকে কিন্তু তারা কোথায় সিআইজি কমিটি গঠন করে প্রকৃত কৃকষরা সেটা জানেন না, আমারও জানা নেই। কৃষি অফিসারদের সুদৃষ্টি থাকলে আমরা আশনুরুপ ফলন পেতাম।
তবে লিচুর এমন অবস্থা আর কৃষি কর্মকর্তাদের যোগাযোগ হীনতায় অনেকেই বলছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের আসলে কাজটা কি, তারা যদি এলাকার নেতাদের মাধ্যমেই কৃষকের মাঠ পরিদর্শনের খসরা তৈরী করেন তবে সরকারের এই দপাতর ঈশ্বরদীতে রাখা মূল্যহীন। কেননা সরকারী বীজ থেকে শুরু করে কোন সেবাই ঈশ্বরদীর প্রকৃদ কৃষকরা পায়না। সবই চলে যায় কৃষি কর্মকর্তাদের পছন্দের অনাবাদিদের ঘরে।
কৃষকদের এমন অভিযোগের পর ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকারের অফিসে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সদুত্তর দেননি বিতর্কিত এই কৃষিকর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে এই কৃষি কর্মকর্তার শুদ্ধাচার পুরস্কারের খবর স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে কৃষকদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে।