একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চে যতই দিন যেতে থাকে, বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন ততই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভাঙার অদম্য নেশায় দুর্বার হয়ে ওঠে।
১৯৭১ সালের ১২ মার্চের ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করলে দেখা যায়, পূর্ববাংলায় পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশের সব কিছুই পরিচালিত হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সরকারি, আধাসরকারি কর্মচারীরা ধর্মঘট চালিয়ে যান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ এমনকি যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো হয়।
ছাত্র-জনতার সঙ্গে পেশাজীবীরাও রাজপথে নেমে এসে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, বিদ্রোহ, বিক্ষোভ তথা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। শিল্পী কামরুল হাসানের আহ্বানে ১২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত শিল্পীদের এক সভায় বাংলার চিরচেনা শাপলাকে জাতীয় ফুল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি এদিন শিল্পী মুর্তজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে এ দিন চারুশিল্প সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায়, ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
বগুড়া জেলখানা ভেঙে এদিন ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে ১ কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হন। অব্যাহত আন্দোলনে সরকারি-আধাসরকারি অফিসের কর্মচারীরা কর্মস্থল বর্জন করেন।
দৈনিক পাকিস্তান (বর্তমান দৈনিক বাংলা) এদিন এক খবরে জানায়, বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তারা চলমান আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করেছেন। আওয়ামী লীগের তহবিলে এক দিনের বেতন অনুদান দিয়েছেন তারা।
ময়মনসিংহে এক জনসভায় আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।’
এদিন লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার একটিমাত্র পথ খোলা। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।