জেলা
প্রশাসকের কর্মচারির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, হাসপাতাল, সিভিল সার্জন,পাসপোর্ট,
রূপালি ব্যাংক,পল্লী বিদ্যুৎ, পৌরসভা, বিআরটিএ, সাব-রেজিস্ট্রি, ভূমি, শিক্ষা অফিস,
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, জেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশসহ ৩৪টি সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ৬০টি
অভিযোগে গণশুনানিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার
(৩ জুন) সকাল ৯টায় ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে রুখব দুর্নীতি গড়ব
দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ স্লোগানে আয়োজিত গণশুনানিতে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়। এতে বিভিন্ন
সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, ঘুষ-দুর্নীতির শিকার সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণ এবং
সেবা প্রদানকারী সরকারি দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
গণশুনানিতে
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
দুদক
সচিব বলেন, আমাদের গণশুনানিটি একটি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে
আমরা সাধারণ মানুষকে নির্ভয়ে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছি এবং তাৎক্ষণিকভাবে কিছু কিছু অভিযোগের
সমাধানও দেওয়া হয়েছে। আশা করি যে সমস্যাগুলোর সমাধান দেওয়া যায়নি, তা ৭-১০দিনের মধ্যে
দেওয়া হবে কিংবা এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
তিনি
আরো বলেন, দুদক নৈমিক্তিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অনুসন্ধান ও তদন্তের ব্যাপারে দুদক কখনই
কাউকে ছাড় দেবে না। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনা বাংলা গড়তে সরকারি পরিষেবা যে কোনও মূল্যে
নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি একদিনে শেষ হওয়ার নয়। এটি দমনে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে।
গণশুনানিতে শোনা সব অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গণশুনানিতে
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার
এবং সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণ দৃঢতার সঙ্গে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগগুলো
উত্থাপন করেন। পরে অভিযোগের সমস্যা সমাধান করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে
নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়া, অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে দুদক
আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
গণশুনানিতে
জেলার ৩০টি সরকারি দফতরের সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার, ঘুষ দিতে বাধ্য, বঞ্চনার
শিকার ইত্যাদি নানা বিষয়ে ৬৯টি অভিযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সমস্যার
সমাধান দেয়া হয়।
এসব
অভিযোগের পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক হাসপাতাল,সিভিল সার্জন, পাসপোর্ট অফিস,
পল্লী বিদ্যুৎ, পৌরসভা, বিআরটিএ, সাব-রেজিস্ট্রি, ভূমি, শিক্ষা অফিস, প্রাথমিক শিক্ষা
অফিস, বিএডিসি অফিস, আনসার ভিডিপি, থানা, পুলিশ ইত্যাদি সরকারি দপ্তরগুলোতে মানুষ বেশি
হয়রানির শিকার হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে,
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও দুদকের মামলার আসামি
শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকার ও জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙিয়ে জেলা পীরগঞ্জ উপজেলার অসহায়
দরিদ্র মানুষদের ভয় দেখিয়ে তাদের কৃষি জমি জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয় এবং টিসিবির পণ্য
প্যাকেটজাত করণে লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন
কর্পোরেশন (বিএডিসি)র এক কর্মকর্তা বিরুদ্ধে কৃষককে সেচ সুবিধা দেয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্য
ও পাম্প বসানোর জন্য গ্রাহককে হয়রাকি ও ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়ারও অভিযোগ করেন এক ব্যাক্তি।
আনসার ভিডিপির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে যানবাহনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভুয়া বিল ভাউচার
করে অর্থ আত্মসাতের বিস্তর অভিযোগ তোলা হয়। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের এম্বুলেন্স
ড্রাইভার আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি বিধিবিধান অমান্য ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ
করেন একব্যাক্তি। রূপালি ব্যাংক ঠাকুরগাঁও শাখায় মৃত স্বামীর সঞ্চিত টাকা তুলতে ঘুষ
ও হয়রানির শিকার হন এক নারী, সাব রেজিস্ট্রার অফিসে টাকা ছাড়া মেনে না সেবা, স্যাটেলম্যান্ট
অফিসের হয়রানী ও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তোলা হয় এছাড়াও পীরগঞ্জ থানা ও সদর থানার কর্মকর্তাদের
বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত হয়রানিসহ ৩৪টি সরকারি বেসকারি প্রতিষ্ঠানের ৬০টি অভিযোগের
বিষয়ে গনশুনানী করা হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ মাহাবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এ গণশুনানিতে আরও বক্তব্য রাখেন,
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক
মো. তালেবুর রহমান, পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক ও ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় দুদকের সমন্বিত
জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক।