পশ্চিম বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারের প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী জংশন স্টেশনটি তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে। মুজিবশত বর্ষ উপলক্ষে কিছুদিন আগে এই স্টেশনটির প্লার্টফরম উচুকরণ ও প্রশস্তকরণের একটি বৃহৎ প্রকল্প ৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায় সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমান সান্তাহার স্টেশনটি নান্দনিক, সৌন্দর্যময় রুপ ধারণ করেছে। এটি ১ম শ্রেনীর একটি জনবহুল ও জনপরিচিত ষ্টেশন।বর্তমানে সান্তাহার জংশন স্টেশনটি তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে।
সান্তাহার স্টেশন মাস্টার কার্যালয় সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে সান্তাহার স্টেশনের পরিবহন খাতে সর্বমোট ৫৯ টি পদের মধ্যে ২৭ জন কর্মরত আছে। বাকী ৩২ জন পদে কোন লোক নেই। আবার ষ্টেশনটির বাণিজ্যিক স্টাফ পজিসনে ৫৩ টি পদের মধ্যে ১৬ জন কর্মরত আছেন। বাকী ৩৭ টি পদ ঘাটতি অবস্থায় আছে। ফলে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে বৃহৎ এই স্টেশনে যাত্রীসেবা দারুণ ভাবে ব্যহত হচ্ছে।
স্টেশনের স্টাফ পজিসন অনুযায়ী স্টেশন মাস্টারের গ্রেড-১ টি মজ্ঞুরী পদ শুণ্য অবস্থায় আছে। নানা গ্রেডের ১৩ টি স্টেশন মাস্টার /সহকারী স্টেশন মাষ্টার পদের বিপরীতে কর্মরত আছে ৮ জন। এই পদে ৫জন ঘাটতি আছে। ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ২ টি মজ্ঞুরী পদ আছে, সেখানে দুটি পদেই কোন লোক বা জনবল নেই। এওয়াইএফ (ইয়ার্ড ফোরম্যান) ২টি মজ্ঞুরী পদ, দুটিই শুণ্য অবস্থায় আছে। টিএনসি/১ ( ট্রান্সসিপম্যান) ২ টি পদ, ২টিই শুণ্য অবস্থায় আছে। কোন লোক নেই এই পদে। টিএনটি (ট্যান্স ক্লাক) ৩টি মজ্ঞুরী পদে ২ জন কর্মরত আছেন, ১টি পদ ঘাটতি আছে।
সান্টিং জামাদার ৪ টি মজ্ঞুরী পদে ১ জন মাত্র কর্মরত আছেন,বাকী ৩ টি পদ শুণ্য অবস্থায় আছে। টিএনসি (ট্রান্স ক্লার্ক) ৮ টি মজ্ঞুরী পদের মধ্যে কর্মরত আছে ১ জন, বাকী ৭টি পদই শুন্যে। পি-ম্যান ( পয়েন্টস ম্যান) পদে ৭টির মধ্যে ৭ জনই কর্মরত আছে এই ষ্টেশনে। জি-কে ( গেট কিপার) পদে ৬টি মজ্ঞুরী পদে ৬ জন গেট কিপারই কর্মরত আছে। সান্টিং পোটার ৬টি মজ্ঞুরী পদে ৬টিই শুন্য অবস্থায় আছে। তাই সান্তাহার স্টেশনের স্টাফ পজিশন(পরিবহন) সেক্টরে ৫৯ টি পদের মধ্যে ২৭ জন কর্মরত, বাকী ৩২ টি পদে ঘাটতি আছে। সান্তাহার স্টেশনে জিএ/১ (গুডস ক্লার্ক) পদে ২টি মজ্ঞুরী পদে কেউ কর্মরত নেই, দুটিই ঘাটতি।
জিএ/২ পদে একজন কর্মরত আছে। ১টি শুন্যে। টিআরসি (ট্রান্সসিপমেন্ট ক্লার্ক) পদ ২টি মজ্ঞুরী, দুটিই শুন্যে। এসআর/১ পদে ১টি মজ্ঞুরীর বিপরীতে একটি পদই শুন্যে অবস্থায় আছে। পিএ/১ পদে ১টির বিপরীতে ১টি পদে কেউ কর্মরত নেই। পিএ/২ পদে একজন কর্মরত আছে। এসআর/২ পদে ১টি পদ আছে এখানে, সেই পদও শুন্যে। বিএ/১ ( বুকিং ক্লার্ক) ১ টি পদে কোন জনবল নেই।
বিএ/২ পদে মজ্ঞুরীকৃত ৮টি পদে ৬ জন কর্মরত আছেন, ২টি পদ শুন্যে। টিসি/১ (টিকিট ক্যালেক্টর) ১ টি পদ, নেই কোন জনবল সেই পদে। টিসি/ ৫টি মজ্ঞুরীকৃত পদে ২ জন কর্মরত আছেন, ৩টি পদই শুণ্যে। টালী সহকারী ৫টি মজ্ঞুরীকৃত পদে ৫টিই ঘাটতি । ল্যাম্প ম্যান পদে ৩টি মজ্ঞুরীকৃত পদে ৩টিই শুণ্যে। পিয়ন/অফিস সহায়ক পদে ৩টি মজ্ঞুরীকৃত পদের মধ্যে ১ জন কর্মরত আছেন, বাকী ২টি পদ শুন্যে।
পোর্টার পদে ৫টি মজ্ঞুরীকৃত পদে ৩ জন কর্মরত আছেন, বাকী ২টি পদ শূণ্যে। ওয়েটিং রুম আয়া পদে ৩টি মজ্ঞুরীকৃত পদে ৩টি পদই শুণ্যে। ওয়েটিং রুম বেয়ারার ৩টি মজ্ঞুরীকৃত পদে একজনও কর্মরত নেই,সবগুলি শুণ্যে। ফলে এই স্টেশনের বিশ্রামাগারগুলি অধিকাংশ সময়ে বন্ধ থাকে। আরআর বেয়ারার ২টি মজ্ঞুরীকৃত পদে ১ জন কর্মরত আছে, ১টি পদ ঘাটতি আছে।
বাবুর্চি পদে মজ্ঞুরীকৃত পদের ২টি পদে কেই কর্মরত নেই। ফলে ২টি শুন্যে। সিলম্যান ২টি পদে ১ জন কর্মরত আছে, ১টি ঘাটতি আছে। অফিস সহকারী (স্টেশন ক্লার্ক) ১টি পদ, ১টি ঘাটতি। ফলে সান্তাহার স্টেশনে স্টাফ পজিশন ( বাণিজ্যিক) শাখায় ৫৩ পদের মধ্যে মাত্র ১৬ জন কর্মরত আছে, বাকী ৩৭ টি পদই শুন্যে।
সান্তাহার জংশন স্টেশনের বর্তমান স্টেশন মাষ্টার(অতিরিক্ত দায়িত্ব) হাবিবুর রহমান এক সঙ্গে ৩টি স্টেশনের দায়িত্ব পালন করছেন। তীব্র সংকটের মুখে সান্তাহার স্টেশনের যাত্রীসেবা ভেঙে পড়েছে।
তিনি জানান, অচিরেই এই জনবল সংকট নিরসন হবে। অনেকে নতুন নিযুক্ত ব্যাক্তিরা প্রশিক্ষণে আছে। তারা এসে কাজে যোগদান করলে এই সমস্যা থাকবে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ( পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, অনেক নতুন নিয়োগ হয়েছে রেলওয়েতে। আশা করছি, এই সমস্যাও দুর হবে।
আজকের দর্পণ/এমদাদুল হক/বগুড়া