বাল্যবিয়ের শীর্ষে রয়েছে পিরোজপুর জেলা। এই জেলায় বাল্যবিয়ের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে কম নেত্রকোণায় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ।
বাংলাদেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে বাল্যবিয়ের চর্চা রয়েছে। গত ৫ বছরে এসব পরিবারের যেসব মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা পুত্রবধূ হিসেবে যারা এসেছে তাদের ৬০ শতাংশেরও বেশি মেয়ের বিয়ের সময় ১৮ বছরের কম ছিল। এ ছাড়া ৫৬ শতাংশ বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের মাধ্যমিক পাস করার আগেই বিয়ে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘চাইল্ড ম্যারেজ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণাটি করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন বেগম মেহের আফরোজ, বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (যুগ্মসচিব) সালেহা বিনতে সিরাজ।
সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির (সেলপ) প্রধান শাশ্বতী বিপ্লব।
বাল্যবিবাহের প্রবণতা ও কারণ জানতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি ২৭টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার খানায় এই জরিপ চালিয়েছে।
জরিপের তথ্য বলছে, এসব জেলায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
বাল্যবিয়ের শীর্ষে রয়েছে পিরোজপুর জেলা। এই জেলায় বাল্যবিয়ের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে কম নেত্রকোণায় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। শীর্ষে থাকা অন্য জেলাগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ, নওগাঁয় ৬৫ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জয়পুরহাটে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ বাল্যবিয়ে হচ্ছে।
এ ছাড়া ‘যোগ্য পাত্র’ পাওয়ার কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ অভিভাবক। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে বাকিদের মধ্যে ১৮ শতাংশ দারিদ্র্য, যৌতুক কম বা না চাওয়ার কারণে ১০ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে ৭ শতাংশ, পড়ালেখায় ভালো না হওয়ার কারণে ৬ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণের কথা বলেছেন ১৫ শতাংশ অভিভাবক।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বাল্যবিয়ে নিয়ে যেসব গবেষণা হয় তার সবই একই রকম। যেসব ছেলেরা অল্পবয়সি মেয়েদের বিয়ে করছে তাদের নিয়ে কোনো গবেষণা হচ্ছে না। সেসব ছেলের ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে। গবেষণাকে আধুনিক করেন। বিদেশ থেকে ছেলেরা এসেই খোঁজে কোন বাসায় অল্পবয়সি মেয়ে আছে। অল্পবয়সি কোনো মেয়েকে বিয়ে করলে প্রথমে ভালো লাগবে কিন্তু কিছুদিন পর বউকে পছন্দ হবে না। কারণ অনেক দিক দিয়ে সে অনভিজ্ঞ থাকবে। শিক্ষায়, চিন্তায়, বয়সে ছোট থাকবে। আবার একটা বাদ দিয়ে আরেকটা বিয়ে করার অভ্যাসও অনেকের আছে।
তিনি বলেন, স্কুলে বিনামূল্যের বই দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে স্কুল পর্যন্ত মেয়েদের সংখ্যা বেশি। তাদের উচ্চ শিক্ষায় বাবা-মা আর পাঠান না।
সালেহা বিনতে সিরাজ বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য এসডিজি। এর প্রধান অন্তরায় বাল্যবিয়ে। আপনাদের গবেষণার যদি কোনো অংশে থাকত সরকার কী কী কাজ করেছে তাহলে ভালো হতো। বাল্যবিয়ে তো এক দিনে শেষ করতে পারব না। বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য সরকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। যেন বাল্যবিয়ে না হয়। কিশোরী মেয়ের মাকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে চাল দিচ্ছি। এই শর্তে দেওয়া হয় যেন তাদের খাদ্যের নিরাপত্তা আছে মেয়েটারও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। আরও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবুও বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না।