রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে বিএফডিসির মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের অফিস ভবন ভাড়া দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন। আড়ৎদারদের থাকার জন্য অফিসের একাংশ ভাড়া দিয়ে নিজের পকেট ভারী করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ওই ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে। নিয়ম বহির্ভূত তার এমন অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অথচ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আড়ৎদারদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত পৃথক ভবন রয়েছে।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে অফিস ভবনের যে কক্ষটি ভাড়া দেয়া হয়েছে, সেই কক্ষটি ল্যাবরেটরি কক্ষ। এখানে অবতরণ কেন্দ্রে প্যাকিং উপযোগী বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মান পরীক্ষা- নিরীক্ষা হওয়ার কথা। এ লক্ষ্যে সরকারিভাবে সরবরাহকৃত বহুমূল্যের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ল্যাবরেটরি কক্ষ থেকে সরিয়ে ছাদের একটি চিলেকোঠা কক্ষে অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে।
এছাড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের শেড এ অনিয়ম করে দুইটি চায়ের দোকান ভাড়াও দিয়েছেন তিনি। আর আড়ৎ ভবনের ভেতরে স্থানীয় বাজারের দুইটি হোটেলের দুইটি কিচেন ভাড়া দেয়া হয়েছে নিজ স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম করে।
শনিবার (৮ জুলাই) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামগতি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সীমানার ভেতরে দ্বিতল অফিস ভবনের নীচ তলায় তিনটি কক্ষ। এর মধ্যে একটি ব্যবস্থাপকের অফিস কক্ষ, একটি অফিস নথি সংরক্ষণের জন্য আলমিরা রাখার কক্ষ। আরেকটি অফিসের অন্যান্য কর্মচারীদের কক্ষ। দোতলায় দুইটি কক্ষ। এর একটি সেমিনার কক্ষ ও অপরটি ল্যাবরেটরি কক্ষ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সেখানে সেমিনার কক্ষে এককোণয় একটি টেবিল পড়ে আছে। কোন চেয়ার নেই। আর ল্যাবরেটরি কক্ষে চকি বিছিয়ে দুইজন লোক বসবাস করছে। তাদের একজনের নাম তপন। আরেকজনের নাম শাহজান। তারা আড়ৎ ব্যবসায়ী ইয়াদ বিশ্বাস জাপানের ব্যবসায়ীক কর্মচারী। যশোর এলাকার মহাজন জাপানের ব্যবসা পরিচালনা করে অফিসের ভাড়া নেয়া কক্ষে থাকছে তারা ৫ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানায়, রামগতি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা করেনা। অনৈতিকভাবে সরকারি অফিস বাইরের লোকের কাছে ভাড়া দিয়ে ভাড়ার টাকা খাচ্ছেন তিনি।
ধরাকে সরা জ্ঞান করে এই অবতরণ কেন্দ্রে নিজের মনগড়া যাচ্ছে তাই করে চলছেন তিনি। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সাথে আঁতাত করে চলায় তার নানান অনিয়ম প্রকাশ্য হলেও এসব বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না।
আড়ৎদার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে জানায়, অবতরণ কেন্দ্রে আড়ৎদারদের জন্য নির্ধারিত ভবনের সবগুলো কক্ষ আড়ৎদারদের জন্য বরাদ্দ না দিয়ে অনিয়ম করে বাইরের হোটেলের কাছে ভাড়া দিয়েছে দুই-তিনটি কক্ষ। এছাড়া ব্যবস্থাপক নিজে নিয়মিত অফিসে না থেকে সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনে অবস্থান করেন দিনের বেশিরভাগ সময়। এমনকি আড়ৎদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বিভিন্ন সুবিধা গোপন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রামগতি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে অফিস কক্ষ ভাড়া দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সব কিছুই আড়ৎদারদের সুবিধার জন্য। এখানে আড়ৎদারদের নির্ধারিত ভবনে সকল আড়ৎদারের সংকুলান হয়নি। তাই অফিসের ল্যাবরেটরি কক্ষ ভাড়া দিয়েছি। আর সম্মেলন কক্ষটি সকলের নামাজ আদায়ের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। এগুলো অনিয়ম নয় দাবি করে তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে অফিস কক্ষ ভাড়া দেয়ার নিয়ম আছে। এর থেকে প্রাপ্ত ভাড়া সরকারের কোষাগারেই জমা হয়। এজন্য রসিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয়। তবে এ সংক্রান্ত কোনো রশিদ কিংবা অফিস রেজুলেশন দেখাতে পারেননি ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন।
এবিষয়ে বিএফডিসি চেয়ারম্যান (অ.দা) ফজলুল হক বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের অফিস কক্ষ ভাড়া দেয়ার কোনো বিধান নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএফডিসি সূত্রে জানা যায়, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভোক্তা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সম্মত মাছ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে মেঘনা নদীর তীরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ একর ৭০ শতাংশ জমির ওপর এ অবতরণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে মাছ অবতরণের জন্য একটি বড় আকারের শেড, একটি প্যাকিংশেড, একটি ইন্সপেকশন কক্ষ ও একটি দ্বিতল আড়ৎ ভবন রয়েছে। আড়ৎ ভবনে ২২ জন আড়ৎদার ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা পরিচালনাসহ আবাসিক সুবিধাভোগ করে থাকে। জেলেদের জন্য দুইটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। একটি বরফ কল রয়েছে, সেটাতে একটি ক্রাশ মেশিন রয়েছে। একটি দ্বিতল অফিস ভবন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি আবাসিক ভবন রয়েছে।
এই অবতরণ কেন্দ্রে অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বাস্থ্য সম্মত মাছ অবতরণ ও বিপণন করা হয় প্রতিমাসে গড়ে ১৩৭ মেট্রিক টন মাছ। এছাড়া মাছের জন্য প্রয়োজনীয় বরফ সরবরাহ করা হয় মাসে গড়ে ১৫৮ মেট্রিক টন। এই অবতরণ কেন্দ্রে আড়ৎদার, জেলেসহ প্রায় ১৫০০ জন মাছ ব্যবসায়ী সম্পৃক্ত। মাছ ব্যবসা, আমদানি-রপ্তানি ও পরিবহন কাজে প্রায় ৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন সুবিধাভোগী হয়ে থাকে। এছাড়া অবতরণ কেন্দ্রের দুইটি পল্টুনে প্রায় অর্ধশতাধিক ইঞ্জিনচালিত জেলে বোট প্রতিদিন মাছ অবতরণ কাজে ভিড়ে থাকে।