বাংলাদেশকে
সোনালী আঁশের দেশ বলা হলেও বর্তমানে পাট চাষ হারিয়ে যেতে বসেছে। একটা সময় পাটের সোনালী
দিন থাকলেও বর্তমানে এর চিত্র ভিন্ন। কয়েক বছর আগে ঠাকুরগাঁও ব্যাপকভাবে পাট চাষ হতো।
কিন্তু ভালো মানের বীজ, পরামর্শ ও ক্ষেতের সঠিক পরিচর্যার অভাবে দিন দিন পাটের চাষাবাদ
বিলুপ্তির পথে। প্রকৃত চাষিরা প্রণোদনা না পাওয়ায় ও পাটের ফলন, জাগ দেওয়ার ব্যবস্থার
অভাবে ও দামের কারণে গতবছরের তুলনায় এবার তিন ভাগের এক ভাগও পাট চাষ হয়নি এ জেলায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিগত পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিলো ৫ হাজার
৮৬০ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন হয়েছিল ১৩ হাজার ১৩৭ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৪ সালে আবাদ
হয়েছে ৬ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে ও পাট উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন।
১৯ সালের তুলনায় এবছর ৩১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হলেও বিগত ১৯ সালের ফলন অনুযায়ী
২৬৩ মেট্রিক টন পাট কম উৎপাদন হয়েছে।
পাট অধিদপ্তর
ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রমান্বয়ে চাষ কমলেও কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে
পাট চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে অন্তরায় হিসেবে পাটের ন্যায্য মূল্য ও জাগ ব্যবস্থাপনাকে
দায়ী করছেন কর্মকর্তারা।
জেলা পাট উন্নয়ন
অফিসের তথ্য মতে, জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্য শুধু চারটি উপজেলার ১০ হাজার ১৯৩ জন চাষিকে
পাট চাষের জন্য প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। এতে প্রত্যেককে ১ কেজি করে বীজ, ৬ কেজি
ইউরিয়া, ৩ কেজি টিএসপি ও ৩ কেজি এমওপি সার ছাড়াও প্রশিক্ষণ বাবদ ৫০০ টাকা সম্মানিসহ
৩০০ টাকা খাওয়া বিল, নাস্তা বাবদ ৮০ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়াও খাতা, কলম ও ব্যাগও
প্রদান করা হয়।
আর জেলা কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকেও ৩ হাজার ৬০০ জন কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার প্রদান
করা হয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কৃষককে পাট চাষ বৃদ্ধির জন্য প্রনাদনা হিসেবে বীজ,
সার ও প্রশিক্ষণ প্রদান বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও এর কোনো উল্লেখযোগ্য সুফল দেখা
যায়নি।
পাট চাষিদের
অভিযোগ তাঁরা কোন ধরণের প্রণোদনা পাননি। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানির অভাবে
দিন দিন পাট জাগ দেওয়া থেকে শুরু করে পাটের রোগ বালই ও খরচ বৃদ্ধি হচ্ছে। সে তুলনায়
ফলন ও দাম কম হওয়ার কারণে গতবছরের তুলনায় এবার তিন ভাগের এক ভাগও জেলায় পাট চাষ হয়নি।
গত বছর যারা পাট চাষ করেছিলো তাদের অনেকে এবার পাট চাষ করেননি। আর যারা করেছে তারা
খুবই স্বল্প পরিমাণের করেছে। তাই এই সোনালী ফসলের চাষ বৃদ্ধি করার জন্য প্রকৃত কৃষকদের
সরকারি সহায়তা প্রদান সহ পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার অনুরোধ তাদের।
রহমান নামে
এক পাট চাষি বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমান পাটের
বাজার দর অনুযায়ী পাট বিক্রি করে আমাদের পাট খড়ি গুলো টিকে না। খরচ অনুযায়ী ন্যায্য
মূল্য পাওয়া যায় না। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার পাটের দাম ও ফলন কম হয়েছে। আমরা প্রকৃত
পাট চাষিরা সরকারি সার বীজ থেকে শুরু করে কোনো ধরেণের সহযোগিতা পাই না। আরেক কৃষক হামিদ
বলেন, আমি তো সরকারি কোনো সহযোগিতাও পাইনি। ঠাকুরগাঁওয়ে আগে ব্যাপক পাটের চাষ হতো।
এবার যা হয়েছে আগামীতে এটাও আর চাষ হবে না মনে হয়।
পাট চাষি হামিদুল
বলেন, কিছু আগে ২ হাজার ৬০০-৭০০ টাকা পাটের মণ ছিল কিন্তু তা কমে এখন ২ হাজার ৫০০ টাকায়
এসেছে। এতে বিঘা প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা লস হচ্ছে। সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভাবে
বলে পাট চাষিদের সার বীজ ও টাকা দেওয়া হয়। কই আমি তো কিছুই পাইনি। যারা পাট আবাদ করি
আমরা যদি সহযোগিতা না পাই। তাহলে কারা পায়। আগামীতে সরকার পাট চাষিদের বিষয়ে পদক্ষেপ
না নিলে ও সহযোগিতা না করলে পাটের আবাদ হয়তো উঠে যাবে।
প্রণোদনার বিষয়ে
জানতে চাইলে জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার মালাকার কোন উত্তর না দিয়ে বলেন,
কৃষকদের তালিকা, কেনা-কাটা সহ প্রণোদনা প্রদানের কাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা করে
থাকেন। তবে কৃষকদের জন্য সরকারের প্রণোদনার কোটির টাকার কোন উত্তর তিনি দেননি।