ইসরাইলের ভূখণ্ডে ইরানের কয়েকশ ড্রোন এবং
মিসাইল হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধজাহাজ
পাঠিয়েছে রাশিয়া।
রবিবার (১৪ এপ্রিল) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা
মন্ত্রণালয়ের বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, মার্শাল শাপোশনিকভ নামে রাশিয়ার ফ্রিগেটটি মিশরের
সুয়েজ খাল হয়ে ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করেছে। এই ফ্রিগেট কিনঝাল সুপারসনিক মিসাইল দিয়ে
সজ্জিত।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পরিকল্পিত
নৌ মহড়ার অংশ হিসাবে কিনঝাল সুপারসনিক মিসাইল সজ্জিত রাশিয়ান নৌবাহিনীর একটি ফ্রিগেট
ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করেছে।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মার্শাল শাপোশনিকভ
তার ওপর অর্পিত কাজগুলি সম্পাদন করে যাবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে এর বাইরে আর বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়নি।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে
অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এতে বিপ্লবী গার্ডের
দুই কমান্ডারসহ ৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হন।
ওই ঘটনার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চরম
উত্তেজন বিরাজ করছে। এই ইস্যুতে আঞ্চলিক বিশৃঙ্খলা এড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সব পক্ষের
প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল ক্রেমলিন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন,
‘এই অঞ্চলের পরিস্থিতি
সম্পূর্ণ অস্থিতিশীলতার দিকে যাতে চলে না যায় সেজন্য এখনই সব পক্ষের সংযম বজায় রাখা
খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে দামেস্কের কনস্যুলেটে হামলার উপযুক্ত
জবাব দেয়ার যে হুঁশিয়ারি ইরানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল তা রোববার (১৪ এপ্রিল) বাস্তবায়ন
করেছে দেশটি। ইসরাইলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে
ইরান।
ইরানের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য,
জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ ইরানের হামলা ঠেকাতে
ইসরাইলকে সহায়তা করেছে। ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র।
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের
সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এক বিবৃতিতে ইসরাইলে ইরানি হামলার শক্ত
ভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন বাইডেন। বিবৃতিতে তেল আবিবকে ওয়াশিংটনের লোহবর্মের মতো সুরক্ষা
দেয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যাক্ত করেন বাইডেন।
এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনী এবং তাদের কোনো
স্থাপনা ইরানের লক্ষ্যবস্তু না হলেও সমস্ত হুমকির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক রয়েছে
বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের দিক
থেকে আসা সব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে ইসরাইলকে সহায়তা করেছে।
এদিকে ইসরাইলে ইরানের এ হামলার ঘটনায় নিন্দা
জানিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ সলজের মুখপাত্র ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, এটি আঞ্চলিক
যুদ্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে।
জার্মানি ইসরাইলের পাশে থাকবে জানিয়ে তিনি
বলেন, এই দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অযৌক্তিক হামলার মাধ্যমে ইরান একটি আঞ্চলিক সংঘর্ষের
ঝুঁকিতে পড়ল।
এদিকে এই ঘটনায় তৃতীয় কোনো পক্ষ নাক গলাতে
এলে কিংবা ইসরাইলের পাল্টা পদক্ষেপে সহায়তা করলে তার বিরুদ্ধেও হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে
ইরান। ওয়াশিংটন ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপে সমর্থন জানালে মার্কিন ঘাঁটিও লক্ষ্যবস্তু
করা হবে বলে জানিয়েছে ইরান।
এদিকে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে
চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলের ওপর ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার প্রতিক্রিয়ায়
জারি করা এক বিবৃতিতে সব পক্ষকে ‘শান্ত ও ধৈর্য’ ধরার আহ্বান
জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে গাজা সংঘাত আরও দীর্ঘ হবে। সংঘাত এখনই শেষ হওয়া
উচিত।
মুখপাত্র আরও বলেন, গত ২৫ মার্চ জাতিসংঘের
নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তা
বাস্তবায়নে আর বিলম্ব করা উচিত নয়। ওই অঞ্চলে ‘শান্তি এবং গঠনমূলক
ভূমিকা পালন করার জন্য’ প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানানো
হয়েছে।