নানা অপকর্মে আলোচিত রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ। এ ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে সংগঠনটি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ছাত্রলীগ।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কতিপয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। কমিটির সদস্যরা হলেন: শেখ শামীম তূর্য, আপন দাস ও তানভীর আব্দুল্লাহ।
বিজ্ঞপ্তিতে ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় দফতর সেলে জমা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানার একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়, যা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। ভাইরাল চার মিনিট ১০ সেকেন্ডের এক অডিওতে এক নারী ছাত্রলীগ নেত্রীকে বিছানায় আসার প্রস্তাব দেন বলে শোনা যায়। এছাড়াও আরেক নারীকে পাঠাতে বলেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
ফাঁস হওয়া ওই রেকর্ডে আরও বলতে শোনা যায় (পুরুষকণ্ঠ), 'তুমি আমার সাথে নাটক করিচ্ছো তাই না?' মেয়েটি বলেন, 'কীসের নাটক ভাইয়া?' রানা বলেন, 'তোমার কথা-কাজে মিল পাচ্ছি না। চিটারি করতে পারবা না। বহুত বড় চিটারি-বাটপারি কইরি আমি প্রেসিডেন্ট হইছি। সব চিটারের দলের সর্দার আমি। তুমি না হয়, আসতে চায়া আসলে না, কাকে যে পাঠাতে চাইলে সে কই? একজনের সাথে কইরি তুমি যদি বড় নেত্রী হও, সেটা মানুষ মাইনি লিতে পারে না, তুমি বুঝো না?'
অপর পাশ থেকে মেয়েটি বলেন, 'এগুলো তো ভাইয়া অবান্তর কথা, আর আমার ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দরকার নাই। আমি যথেষ্ট ভালো আছি। সংগঠনটাকে ভালোবেসেই আসছিলাম।' রানা বলেন, 'তাহলে শোন ঠিক আছে আর শান্ত-মান্তর কোনো বেল নাই।' মেয়েটি বলেন, 'তো ভাইয়া আপনি মেয়ের কথা কালকে বলছিলেন, তো আমি ছবি পাঠাইছিলাম।' রানা উত্তরে বলেন, 'দেখ দেখ পাঠাতে পারো নাকি?' মেয়েটি জানান, 'উনিও তো ফ্যামিলির সঙ্গে থাকে।' রানা বলেন, 'এখন আটটা বাজে। কী এমন রাত? দেখ দেখ ফোন দাও। পাঠাও। কেউ যেন না জানে।' মেয়েটি বলেন, 'কে জানবে, আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন।' যদিও অশ্লীল ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে রানা বলেন, 'সেটা আমি না। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।'
এই নেতারা বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন, মাদক গ্রহণ করে মাতলামি করা, এক সময়ের ছাত্রদল নেতাকে ছাত্রলীগের পদে বসানো, নিজ দলের কর্মীকে মারধর করার অভিযোগও ওঠে জোরেশোরে। এছাড়া প্রথমে শিবির, পরে ছাত্রদল হয়ে ছাত্রলীগে আসার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও সাকিবুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। রাবির এডহক শাখায় চাকরি দিতে তিনি এক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা যায়।
এদিকে, মাদক সেবন ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধেও। গত ২৬ জুলাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবী হোস্টেলে মিলন হোসেন নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেতা অমির বিরুদ্ধে। মাদক সেবনসহ খারাপ পরিবেশ দেখে অমির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে এ নির্যাতন করা হয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিমানবন্দরে প্রকাশ্যে আমিনুল ইসলাম সবুজ নামের ছাত্রলীগের এক কর্মীকে পেটান অমি। ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে মারধর করেন তিনি।