পটুয়াখালীতে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঈদ পালন করতে আসা লোকজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। রবিবার একদিনে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দুমকী উপজেলার আঠারোগাছিয়া গ্রামের ফাতেমা বেগম (৫০) জানান, তার ছেলে ছেলেবউ ও নাতনী ঈদের আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসেন।ঈদের পরের দিন নাতনি ছুবা (২) হঠাৎ জ্বর উঠলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।পরে পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দুদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার লাউকাঠি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে শুধু একটা খাবার স্যালাইন ও একটা গ্যাসের ট্যাবলেটেই এখানকার চিকিৎসা সীমাবদ্ধ। টেষ্টসহ বাকী সকল ঔষধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এখানে কোন চিকিৎসাই পাচ্ছি না।
সোলাইমান নামে আরেক রোগী বলেন, তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য ঈদের দুদিন আগে বাড়িতে আসেন এবং ঈদের পরদিন তার ভীষণ জ্বর শুরু হয়। জ্বর না কমায় ৪ জুলাই তিনি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পরেই তার হাতে নার্সরা একটা স্লিপ ধরিয়ে বাইরে থেকে ঔষধ কেনার জন্য বলেন। এছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন এখানে যেকোন সময় সুস্থ রোগীরও ডেঙ্গু হতে পারে। ওয়ার্ডের পাশেই ময়লা আবর্জনার স্তুপের দূর্গন্ধ ও মশার উপদ্রপ খুবই বেশী। হাসপাতালে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় এবং এখানেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাউফল উপজেলার দোয়ানি গ্রামের আব্দুর রহিম (২৭) ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল ঘরামিও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৬ দিন ধরে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আক্রান্তদের মধ্যে অন্যান্য উপজেলার থেকে পটুয়াখালী সদর উপজেলায় রোগীর সংখ্যা বেশি।
রবিবার সকালে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত ২২টি শয্যায় রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। মশারী ব্যাবহারে রোগীদের অনিহার কারণে অন্য ওয়ার্ডের সাধারণ রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে। তবে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় আরও ৬ জন রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মেডিকেল কলেজে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ডিউটিরত চিকিৎসক জানান, এখানে সীমিত পরিমান শয্যা রয়েছে। তবে গতকাল আরও ১০ জন রোগী ভর্তি হওয়ায় তাদেরকে সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা জানান, ঈদের আগে রোগী কম ছিল। কিন্তু ঈদের পরেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। রবিবার হাসপাতালে ১০ জন নতুন রোগী এসেছে। ঈদ পালন করার জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লোকজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আসলে তাদের মাধ্যমে এখানে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে তাদের জন্য শয্যা সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ৯ জুালাই পটুয়াখালীতে মোট ৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮ জন, দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন, বাউফলে ৬ জন, কলাপাড়ায় ৪ জন, মির্জাগঞ্জে ২ জন এবং দুমকী ও গলাচিপায় ১ জন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন ।
পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. কবির হাসান বলেন, মুলত ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে লোকজন বাড়িতে আসে। পরবর্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতেকরে দিন দিন এ জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে তিনি সচেতনাতাকেই এ রোগ থেকে মুক্তির প্রধান উপায় বলে মনে করেন। জানুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত পটুয়াখালীতে ২৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানের চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৪ জন। বাকীরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে গেছেন।