সিঙ্গাপুরের শিল্পোৎপাদন খাতে শ্লথগতি অব্যাহত রয়েছে। সেপ্টেম্বরে উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দেশটির প্রধান ইলেকট্রনিকস খাতের উৎপাদন নিম্নমুখী। এ নিয়ে টানা তৃতীয় মাসের মতো এ খাতের উৎপাদন কমেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো এবং মন্দার ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই উৎপাদন খাতে এমন ধীরগতির তথ্য জানাল এশিয়ার নগর রাষ্ট্রটি।
সিঙ্গাপুরের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (ইডিবি) প্রকাশিত তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বরে মোট উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে বায়োমেডিকেল ম্যানুফ্যাকচারিং বাদে উৎপাদন ২ শতাংশ বেড়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা সামগ্রিক উৎপাদন ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তবে পরিবহন প্রকৌশল এবং সাধারণ উৎপাদন আগস্টের দশমিক ৫ শতাংশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশটির মোট জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান প্রায় ২২ শতাংশ।
দেশটির ইলেকট্রনিকস খাতের মন্দা পুরো উৎপাদন খাতকে টেনে ধরেছে। গত মাসে এ খাতের উৎপাদন ৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এর আগে আগস্টে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জুলাইয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ কমেছিল। যদিও ইলেকট্রনিকস শিল্পকে সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এটি রফতানি-সম্পর্কিত উৎপাদনের ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। বৈশ্বিক চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ায় অন্যান্য ইলেকট্রনিক মডিউল ও যন্ত্রাংশ বিভাগের উৎপাদন ২৯ দশমিক ১ শতাংশ কমে গিয়েছে। পাশাপাশি কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ ও ডাটা স্টোরেজের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং সেমিকন্ডাক্টরের উৎপাদন ৮ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে গত মাসে টেলিকমিউনিকেশন ও ভোক্তা ইলেকট্রনিকস বিভাগের উৎপাদন ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। রাসায়নিকের উৎপাদন বছরওয়ারি ৭ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। তবে বিশ্বজুড়ে কোভিডজনিত নিষেধাজ্ঞা শেষে উড়োজাহাজ ভ্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং জেট ফুয়েলের উচ্চ চাহিদার কারণে পেট্রোলিয়াম উৎপাদন ১২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য রাসায়নিক বিভাগের উৎপাদন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। এ সময়ে খনিজ তেল ও শিল্প গ্যাসের উৎপাদন কমার কথা বলা হয়েছে। যখন অন্যান্য রাসায়নিক বিভাগের সুগন্ধির উৎপাদনও কমে গিয়েছে।
কারখানা রক্ষণাবেক্ষণ ধীর হয়ে যাওয়ায় পেট্রোকেমিক্যাল বিভাগের উৎপাদন ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে পরিবহন প্রকৌশল শিল্প সেপ্টেম্বরে ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি উপভোগ করেছে। সামুদ্রিক ও অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উৎপাদনও ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রসারিত হয়েছে। শিপইয়ার্ডগুলোর কার্যক্রমের পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও গ্যাসের উচ্চ চাহিদা এ বিভাগের উৎপাদনে উল্লম্ফন তৈরিতে সহায়তা করেছে। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ বাড়ায় উড়োজাহাজ যন্ত্রাংশের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। একই কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিভাগটির উৎপাদন ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। পানীয় ও দুগ্ধজাত পণ্যের উচ্চ উৎপাদনের কারণে খাদ্য, পানীয় ও তামাক বিভাগ ৩৬ শতাংশ প্রসারিত হয়েছে। বিবিধ শিল্প বিভাগের উৎপাদন বেড়েছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। যেখানে মুদ্রণ বিভাগের প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
সিঙ্গাপুর ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উৎপাদন খাতও ধীর হয়ে গিয়েছে। টানা কয়েক মাস ধরে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির খাতটি সংকোচনের মধ্যে রয়েছে। রেকর্ড মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানোর পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ অবস্থায় কমে গিয়েছে চাহিদা। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উৎপাদন খাত।