মহামারীর বিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। দ্রুতগতিতে বাড়ছিল অর্থনৈতিক কার্যক্রম। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) অপ্রত্যাশিতভাবে সংকোচনের মুখোমুখি হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটির জিডিপি কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। কভিডজনিত প্রণোদনা বন্ধ এবং রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি জিডিপি কমাতে অবদান রেখেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এপির খবরে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি সংকোচনের পাশাপাশি উচ্চমূল্যস্ফীতি ও সুদের হার বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে হুমকি তৈরি করেছে। যদিও বছরের বাকি সময়ে অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে ফিরবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এক্ষেত্রে শক্তিশালী ভোক্তা চাহিদা ও কর্মসংস্থানের বাজার সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। কোভিড-১৯ মহামারীর আঘাতে ২০২০ সালে রেকর্ড সংকোচনের পর জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আবারো সংকুচিত হলো মার্কিন জিডিপি। যদিও মন্দায় পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের।
বাণিজ্য বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, গত প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি পতনের দুটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সময়ে দেশের আমদানি প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। শক্তিশালী ভোক্তা চাহিদা মোকাবেলায় বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে হয়েছে ওয়াশিংটনকে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় চাহিদা ধীর ধীরে বাড়ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। এতে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। এটি জিডিপি থেকে ৩ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট বিয়োগ করেছে।
এদিকে গত বছরের ছুটির কেনাকাটার মৌসুমের আগে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো আক্রমণাত্মকভাবে পণ্যের মজুদ বাড়িয়েছিল। মহামারীজনিত সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কা থেকেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। তবে চলতি বছরের শুরুতে ব্যবসাগুলোর মজুদ কমে আসে। এটি দেশটির জিডিপিকে দশমিক ৮ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে। সবমিলিয়ে গত তিন মাসে দেশটির পণ্য ও পরিষেবার সামগ্রিক উৎপাদন পতনের মুখে পড়েছে। যেখানে গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এদিকে ক্রমবর্ধমান মজুরি মার্কিন পরিবারগুলোর ব্যয়কে শক্তিশালী পর্যায়ে রেখেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চমুনাফা বিনিয়োগও বাড়িয়ে তুলছে। এ বিষয়গুলো আগামীতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশা দেখাচ্ছে। এমনকি মহামারী, ইউক্রেন যুদ্ধ ও মূল্যস্ফীতি কমাতে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়ে তুললেও চলতি বছর অর্থনীতি প্রসারিত হবে বলে আশা বিশ্লেষকদের।
অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ লিডিয়া বউসর বলেন, প্রথম প্রান্তিকের পরিসংখ্যান যতটা উদ্বেগজনক মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি ততটা আশঙ্কাজনক নয়। নানা প্রতিবন্ধকতা ও অনিশ্চয়তার মুখেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করছে। মার্কিন অর্থনীতি একটি অস্বাভাবিক ও চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে রয়েছে। অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ কর্মসংস্থানের বাজার শক্তিশালী রয়ে গেছে। বেকারত্বের হার ৫০ বছরের সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৬ শতাংশের কাছাকাছি এবং মজুরি ক্রমবর্ধমান রয়েছে। আবার রেকর্ড উচ্চতায় মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ভোক্তারা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়েছে। এ বিষয়গুলো অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখবে বলে আশাবাদী অর্থনীতিবিদরা।
তার পরও মারাত্মক হুমকি রয়ে গেছে। চীনসহ বিভিন্ন দেশে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন মূল্যস্ফীতির পারদ বাড়িয়ে তুলছে। ফলে কমে যাচ্ছে ভোক্তাদের ব্যয় করার সক্ষমতা। মার্চে পণ্যের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, যা চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাছাড়া প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি সংকোচন গত বছরের উল্লম্ফনের তুলনায় হিসাব করা হয়েছে। সে সময় বিপুল পরিমাণ সরকারি প্রণোদনা ও রেকর্ড নিম্ন সুদের হার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছিল।