চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পরৈকোড়া ইউনিয়নের
পূর্বকন্যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চলছে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম।
ভবনের অর্ধেক পুলিশ ফাঁড়ির দখলে থাকায় একদিকে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে
ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে এসে পাঠদানে মনোযোগ
ও খেলাধুলায় মেতে ওঠার কথা থাকলেও কোনোটাই তারা স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না। কারণ
তাদের বিদ্যালয়ের ভবনের অর্ধেক পুলিশ ফাঁড়ি দখলে। অন্যদিকে স্কুলে আসা শিশুরা থাকে
ভয়ে। এতে কমেছে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ
শিক্ষার্থীদের। প্রধান শিক্ষক জানান, পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তরে আবেদন করা হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে বিদ্যালয়ে দেখা যায়, তিনতলা
বিদ্যালয় ভবনটি সাইক্লোন শেল্টার হওয়ায় নিচতলা খালি, দ্বিতীয় তলার চারটি কক্ষের একটি
অফিস, তিনটি শ্রেণিকক্ষ, ভবনের বারান্দায় বসে চলছে একটি শ্রেণির কার্যক্রম। তৃতীয়তলার
সব কক্ষ দখল করে আছে পুলিশ ফাঁড়ি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত
বিদ্যালয়টিতে ১৯৯৩ সালে সৌদি সরকারের আর্থিক অনুদানে তিনতলাবিশিষ্ট বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন
শেল্টারের একটি ভবন নির্মিত হয়। ১৯৯৫ সালে এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ের
তৃতীয়তলা দখল করে শুরু হয় পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম। পুলিশ ফাঁড়ির কারণে বিদ্যালয়ে এসে
যেখানে পাঠদানের আগে বা পরে খেলাধুলায় মেতে ওঠার কথা শিক্ষার্থীদের, সেখানে পাঠদান
বা খেলাধুলার কোনোটাই তারা স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না। অপরাধীদের আনা- নেওয়ার কার্যক্রম
চলায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। মাঝেমধ্যে পুলিশ যখন অভিযান চালিয়ে আসামি
ধরে এনে বিদ্যালয়ের বারান্দায় বা ওপরে বেঁধে রাখে, তা দেখে শিশুরা ভয় পায়।দীর্ঘ ২৮
বছর ধরে এভাবে চলছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৫৮ শিক্ষার্থী
ও পাঁচ শিক্ষক রয়েছেন। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান দিতে
চারটি শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি কক্ষ ও একটি
স্টোর কক্ষ প্রয়োজন; কিন্তু বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলাটি পুলিশ ফাঁড়ির দখলে থাকায় দ্বিতীয়তলার
চারটি কক্ষে সব কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থী নিহা জানান,পুলিশ আসামি ধরে
আনলে ভয় লাগে, পুলিশ দেখে ভয়ে আমার ছোট ভাই ফোরকান স্কুলে আসতে চায় না।
প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়
ভবন থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সমস্যা।
ফাঁড়ির কারণে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রঞ্জন
ভট্টাচার্য বলেন, বিদ্যালয় ভবনে পুলিশ ফাঁড়ির কারণে শিক্ষার্থীরা ভয়ে থাকে, পুলিশ ফাঁড়ি
সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদ
বলেন,দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে,তখন কখনো সমস্যা হয় নি, এটা চোর ডাকাত
যারা অপরাধ করতে পারে না,সন্ত্রাসের উপর হামলা
করতে পারে না, তারাই আতংকে আছে।পুলিশ ফাঁড়ির ক্যাম্প সরালে সন্ত্রাসী হামলা হবে,ঐখানে
ডাকাতি বাড়বে।এলাকাটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব খারাপ। বিকল্প না থাকায় বিদ্যালয়ের
ভবনে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমরা বিকল্প ভবন পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে
বিদ্যালয় থেকে পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেওয়া হবে।