চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটি দারুণ কেটেছে
বাংলাদেশের। শুরুতে উইকেট হারালেও দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন লিটন
দাস এবং মুশফিকুর রহিম। কাল সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছেন ডানহাতি ব্যাটার লিটন। তবে, আজ
দুজনেই ফিরে গেলেন দ্রুত। সেট দুজন ব্যাটার ফিরলে শেষদিকে মেহেদী মিরাজের ব্যাটে চড়ে
প্রথম ইনিংসে মোটামুটি লড়াইয়ের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে আগে ব্যাট
করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রান করে থেমেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বাধিক ১১৪ রান করেছেন
লিটন। মুশফিকুর রহিম করেছেন ৯১ রান। আজ দ্বিতীয় দিন ৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে
আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দিনের শুরুতেই ফিরলেন আগের দিনের
সেঞ্চুরিয়ান লিটন। হাসান আলীর বলে এলবিডব্লিউ’র শিকার হন তিনি।
যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। পরে সফল রিভিউয়ে লিটনকে ফেরায় পাকিস্তান। লিটনের বিদায়ে
ভাঙে ২০৬ রানের জুটি। ২৩৩ বলে ১১ চার এবং এক ছক্কায় ১১৪ রান করে ফিরেন লিটন।
এরপর ব্যাটিংয়ে নামা ইয়াসির রাব্বি নিজের
অভিষেক রাঙাতে পারেননি। হাসানের সুইংয়েই উড়ে গেল তাঁর স্টাম্প। অভিষেকে ১৯ বলে ৪ রান
করেন রাব্বি।
এরপর হতাশা সঙ্গী হয় মুশফিকের। সেঞ্চুরির
কাছে গিয়েও পারলেন না স্পর্শ করতে। মুশফিককে কট বিহাইন্ড করে থামান ফাহিম আশরাফ। আম্পায়ার
আউট দিলে রিভিউ নেন এ মিডল অর্ডার ব্যাটার। কিন্তু, রক্ষা পাননি। ৮২ রান নিয়ে দিন শুরু
করা মুশফিক থামলেন ৯১ রানে। টেস্টে এ নিয়ে চতুর্থ বার নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার হলেন
মুশফিক।
প্রথম দেড় ঘণ্টায় তিন জনকে হারানোর পর
কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন মেহেদী-তাইজুলের জুটি। তবে, সে জুটিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ফিরে
যান তাইজুল। শেষদিকে মিরাজের ব্যাটে ৩৩০ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। ৬৮ বলে ৩৮ রান করেন
মেহেদী মিরাজ।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সাবধানী ব্যাটিংয়ে
শুরু করেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলাম। তবে বেশি দূর যেতে পারেনি ওপেনিং
জুটি। দলীয় ১৯ রানে মাথায় জুটি ভাঙে।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে শাহীন শাহ আফ্রিদির
বলে শর্ট ফাইন লেগে আবিদ আলীর হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাইফ। অবশ্য বলটি সাইফের ব্যাট ছুঁয়ে
কাঁধে লেগে ওপরে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্যাচ লুফে নেন আবিদ। ব্যক্তিগত ১৪ রানে
সাজঘরে ফেরেন তরুণ এ ওপেনার। এরপর টেকেননি আরেক ওপেনার সাদমানও। ঠিক ১৪ রান করে তিনিও
বিদায় নিয়েছেন।
এরপর সাজিদের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন
বাংলাদেশ অধিনায়ক। অবশ্য সাজিদের বলেই প্রথমে রিভিউতে বাঁচেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাঁর
ওভারেই আউট হন। ১৯ বলে ৬ রান করে ফিরে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর হতাশা বাড়ান
নাজমুল হোসেন শান্ত। ফাহিম আশরাফের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট ছেড়ে দিতে পারতেন তিনি।
কিন্তু, পারলেন না। ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নিয়ে নেন সাজিদ খান। ৩৭ বলে ২ চারে ১৪ রান করেন
শান্ত।
ওই চাপের মধ্যেই শক্ত জুটি বাঁধেন মুশফিক
ও লিটন দাস। দুজনের ব্যাটে দ্বিতীয় সেশন দারুণভাবে পার করে বাংলাদেশ। প্রথম দেড় ঘণ্টায়
চার উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে একটিও উইকেট হারায়নি। সমালোচনাকে দূরে ঠেলে
দারুণ ব্যাটিং করেন লিটন। নুমান আলীকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯৫ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের
দশম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি। লিটনের পর হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। হাসান আলীকে পরপর দুটি
চার মেরে পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। হাফসেঞ্চুরি করতে মুশফিকের লেগেছে
১০৮ বল। পরে ঠান্ডা মাথায় খেলে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান লিটন। ১৯৯ বলে নুমানের বলেই
সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি। মুশফিক-লিটনের প্রথম দিনে ভালো লড়াই করে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন শেষে ২৫৩/৪)
১১৪.৪ ওভারে ৩৩০ (সাদমান ১৪, সাইফ ১৪, শান্ত ১৪, মুমিনুল ৬, মুশফিক ৯১, লিটন ১১৪, ইয়াসির
৪, মিরাজ ৩৮, তাইজুল ১১, আবু জায়েদ ৮, ইবাদত ০; আফ্রিদি ২৭-৮-৭০-২, হাসান ২০.৪-৫-৫১-৫,
ফাহিম ১৪-২-৫৪-২, সাজিদ ২৭-৫-৭৯-১, নুমান ২৬-৬-৬২-০)।