ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার সরকারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ এর রূপরেখা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’ আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অগ্রাধিকার পাবেন তরুণ প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ দলীয় একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে আগামী সংসদ নির্বাচনে বয়স্ক, অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে এমন অনেক প্রার্থী মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। এ নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ক্ষমতাসীন দল ইতোমধ্যে একাধীক জরিপ পরিচালনা করেছেন যা আরো কয়েকমাস চলমান থাকবে এরপর চূড়ান্ত হবে মনোনয়ন। প্রাথমিক জরিপে অনেক সাংসদ ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের তথ্য দলীয় প্রধানের হাতে জামা পরেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
দলীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ সময় হলেও বিএনপি নির্বাচনে আসবে এমনটা বিবেচনা করে এলাকার পরিচ্ছন্ন ইমেজ, সৎ ও তরুণরা হবেন আগামীর প্রার্থী। এছাড়া শরীকদলের সাথে আসন ভাগাভাগী না করে তিন’শ আসনে প্রার্থী দিতে পারেন তারা। এ কারণে বিতর্কিতদের দূরে রাখতে চায় দলটি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে জরিপ কার্যক্রমে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে অনেকেই টানা ক্ষমতায় আছেন এর ফলে তারা অনৈতিক কর্মাকাণ্ডের সাথে যুক্ত হয়ে পরেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের থেকেও বেড়েছে দূরত্ব, এলকায় জনপ্রিয়তা তলানীতে এসে পৌছেছে। তাদের প্রার্থী দিলে দলের নেতাকর্মীরাই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে এসব এমপি ভরাডুবির শিকার হবেন। তাই এবার তাদের ওপর কোনোভাবেই ভরসা করছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পুরোনো নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত বলয় তৈরির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যাচ্ছেন-দেশজুড়েই এমন অভিযোগ পেয়েছেন জরিপ কাজে অংশ নেওয়া টিমগুলোর সদস্যরা। বর্তমানে কোনো কোনো এমপির অত্যাচারে ঘরছাড়া হয়েছেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এসব তথ্যযুক্ত প্রতিবেদন জরিপকারীরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন।
সর্বশেষ ২২ জুন অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার আগে আরেকটি অর্থাৎ শেষ জরিপ চালানো হচ্ছে। এই জরিপের ফলাফল মনোনয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বৈঠকে শেখ হাসিনা জানান, ইতোমধ্যে ১৭টির মতো জরিপ চালানো হয়েছে।
জরিপ পরিচালনা কাজে যুক্ত এমন একটি সূত্র থেকে জানাগেছে, আগামী নির্বাচনে প্রতিপক্ষের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাদের দিয়ে হতে পারে, পৃথকভাবে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের তালিকাও তৈরি করছে দলটি। বিএনপি নির্বাচনে এলে একরকম আবার না এলে আরেক ধরনের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। এ কারণে শাসক দলটি এখনই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করবে না। তবে পৃথকভাবে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়দের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারক। তার মতে, প্রার্থী তালিকার ব্যাপারে চূড়ান্ত মতামত দেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রভাবশালী নেতা জানান, বেশকিছু এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আগামীর নির্বাচনে অনেক নতুন এবং তরুণ মুখের দেখা মিলবে, তবে সবকিছুই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন দলীয় সভাপতি ও প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, দলের বেশকিছু এমপির বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। অনেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়েছেন। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে। আগামী নির্বাচনে যাতে ভালো মানুষ দলীয় মনোনয়ন পান, সেই চেষ্টা থাকবে। যোগ্যতার বিচারে যারা টিকবেন না, তারা বাদ পড়বেন। যারা ভালো প্রার্থী, তারা মনোনয়ন পাবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দলীয় কোনো এমপি যদি কোনো ধরনের অনিয়ম বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে দলীয় প্রধান হিসাবে অবশ্যই তিনি (শেখ হাসিনা) ব্যবস্থা নেবেন।
এই টিমের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের আমলনামা নিয়ে তারা কাজ করছেন। তারা যে তথ্য পাবেন, তা-ই দলের হাইকমান্ডে পাঠানো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবন সূত্র জানিয়েছে, বিতর্কিত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং জনবিচ্ছিন্ন এমপিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড দলীয় কার্যালয়ে জমা হওয়া অভিযোগ এবং ইতোপূর্বে পরিচালিত জরিপ টিমগুলোর প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করছে। অক্টোবর নাগাদ এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত হবে।