আমেরিকার লাস
ভেগাসে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি মেলা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো (সিইএস)।
এটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রদর্শনের বৈশ্বিক মঞ্চ। মেলায় বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো
তাদের উদ্ভাবন ও পণ্য প্রদর্শন করছে। সিইএসে দর্শনার্থী, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ এবং
এ খাতের ব্যবসায়ীদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে ভবিষ্যত পৃথিবী দেখার প্রযুক্তি মেটাভার্স,
চালকবিহীন গাড়ি এবং স্মার্ট বাড়ি।
‘সিইএস ২০২৩’ আসরে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে মেটাভার্স থিম। এই প্রযুক্তির ফলে
অনলাইনের ভার্চুয়াল জগতকে সত্যিকারের বাস্তব পৃথিবীর মতো মনে হবে যেখানে মানুষের গতিবিধি
হবে বহুমাত্রিক। মেটাভার্সের দুনিয়ায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) হেডসেট, অগমেন্টেড
রিয়েলিটি চশমা, স্মার্টফোন অ্যাপ কিংবা অন্যান্য ডিভাইসের মাধ্যমে অফিসের কাজ থেকে
শুরু করে খেলা, কনসার্ট, সিনেমা, অনলাইন শপিং, এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও দেয়া যায়।
সিইএসে অনেক
কোম্পানি ভিআর এবং এআর প্রযুক্তিতে তাদের লেটেস্ট উদ্ভাবনী পণ্যগুলো উন্মোচন করেছে।
এর মধ্যে স্পিচ প্রাইভেসি মাস্ক থেকে শুরু করে স্মার্ট গল্ফিং টুলস, স্মার্ট পাঞ্চিং
ব্যাগ কভার, ইলেকট্রিক ইনলাইন স্কেট এর মতো আরো অনেক উদ্ভাবনী পণ্য রয়েছে। মেলায় স্টার্ট-আপ
প্রতিষ্ঠান ‘ওভিআর টেকনোলজি’ এমন একটি হেডসেট উপস্থাপন করছে, যাতে গেমিংয়ের বাইরেও স্বাস্থ্য এবং
সুস্থতার ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। সিইএসের একটি অংশও দেয়া হয়েছে ওয়েবথ্রি প্রযুক্তির
জন্য। যেখানে মাইক্রোসফ্ট এবং গাড়ি নির্মাতা স্টেলান্টিস যৌথভাবে মেটাভার্সের একটি
শোরুম তৈরিতে কাজ করছে।
সিইএসে গাড়ি
নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কি প্রযুক্তি নিয়ে এলো সেদিকে চোখ থাকে পুরো বিশ্বের
গাড়িপ্রেমীদের। এবারের মেলায় জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হোন্ডার সঙ্গে যৌথভাবে
তৈরি বিশেষ ইলেকট্রিক গাড়ির প্রোটোটাইপ নিয়ে এসেছে সনি। ‘আফিলা’ নামে গাড়িটিতে রয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে
গাড়ি চালানোর সুযোগ এবং বনেটের সামনে বিশাল এলইডি পর্দা। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাইয়ের স্টলে চালকবিহীন গাড়ি দেখতে প্রচুর দর্শক ভিড় জমাচ্ছেন।
এই প্রথম বাংলাদেশ
থেকে সিইএস ফেয়ারে অংশ নিয়েছে দেশটির শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন ও
রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। সিইএসে প্রতিষ্ঠানটি সবুজ ও টেকসই নানান স্মার্ট গৃহস্থালী
এবং প্রযুক্তিপণ্য উপস্থাপন করছে। ওয়ালটনের পণ্যে মানুষের স্মার্ট জীবন-যাপন, খাদ্য
ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বর্তমান
সময়ে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্মার্ট বাড়ির ওপর খুব
গুরুত্ব দিচ্ছে। বিভিন্ন গৃহস্থালী পণ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বা এআই প্রযুক্তির
সংযোজন স্মার্ট বাড়ির ধারনাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। সিইএস ফেয়ারে সাধারণ মানুষের
মাঝে এই স্মার্ট বাড়ি খুবই আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
ওয়ালটন সূত্রে
জানা গেছে, সিইএস ফেয়ারে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানটি এআই নির্ভর নানান স্মার্ট ইলেকট্রনিক্স
ও প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শন করছে। যার মধ্যে রয়েছে স্মার্ট ফ্রিজ, স্মার্ট টিভি ও এডুকেশনাল
ডিসপ্লে, স্মার্ট এসি, স্মার্ট ওয়াশিং মেশিন, স্মার্ট টেবিল, স্মার্ট এলইডি লাইট ইত্যাদি।
সাধারণ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি যা নজর কাড়ছে অ্যামেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী
ও উদ্যোক্তাদের। সিইএস ফেয়ারের সেন্ট্রাল হলের ওয়ালটনের ১৭৯২৮ নাম্বার প্যাভিলিয়নটিতে
প্রথম দিন থেকেই আমেরিকার ফ্লোরিডা, মিয়ামি, মিনোসোটা ইত্যাদি অঙ্গরাজ্য থেকে দর্শনার্থীসহ
ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবসায়ীরা ভিড় জমাচ্ছেন।
বিভিন্ন দেশের
সম্ভাব্য ক্রেতা ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওয়ালটন কর্মকর্তাদের
ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। মেক্সিকো, ব্রাজিল, লাইবেরিয়া, কাতার, ওমান, লিবিয়া, নাইজেরিয়া
ইত্যাদি দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে ওয়ালটন পণ্য আমদানির বিষয়ে ব্যাপক
আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমেরিকার সবচেয়ে বড় একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসের সঙ্গে ওয়ালটনের দ্বি-পাক্ষিক
ব্যবসার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। আগামি ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ থেকে ওই মার্কেটপ্লেসের
মাধ্যমে আমেরিকার বাজারে ওয়ালটন পণ্য বিক্রির জন্য উন্মুক্ত হবে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ
অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ী ও ডিলারগণের কাছে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে ওয়ালটনের টেলিভিশন,
রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার ও ল্যাপটপ পণ্য।
মেলায় ওয়ালটন
প্যাভিলিয়নের সামগ্রিক দেখভাল করছেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি.’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান
নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুর্শেদ। তিনি বলেন, সিইএসে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশকে উপস্থাপন
করছি। প্রযুক্তির এই সর্ববৃহৎ বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশ তথা ওয়ালটনকে তুলে ধরছি। সিইএস
ফেয়ারে ওয়ালটনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ ধারনা বিশ্বজুড়ে আরো একধাপ এগিয়ে
গেলো। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো মেলার প্রথম দিন থেকে বিভিন্ন দেশের দর্শনার্থী ও
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা অবিশ্বাস্য সাড়া পাচ্ছি। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান
ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। এই মেলার মাধ্যমে আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপসহ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৃহৎ আকারে আমাদের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ হবে।
মেলার শেষ দুই
দিন যথা শনিবার ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি বলে আরো বেশি দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ী পাবেন
বলে তিনি জানিয়েছেন। চার দিনের এ মেলা শেষ হবে ৮ জানুয়ারি।