ভারতীয় উপমহাদেশে এসে আম খেয়ে এর মিষ্টি স্বাদে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। পরে গ্রিসে ফিরে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে প্রচুর আম নিয়ে যান তিনি। চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং বাংলাদেশ ভ্রমণে এসে আম খেয়ে মুগ্ধ হন। এমনকি ব্রিটেনের মহারানী ভিক্টোরিয়াও আমে মুগ্ধ হয়েছিলেন। কালের বিবর্তনে এখন নানা জাতের আম চাষ হয় বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও কয়েক শ’ জাতের আমচাষ হয়।
আম এখন সারাবছর পাওয়া গেলেও এটি মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। ভারতীয় উপমহাদেশে আমের মতো জনপ্রিয় ফল সম্ভবত দ্বিতীয়টি আর নেই। অনেকেই জানেন না এই আমকে উৎসর্গ করে একটি দিবসও আছে। আর আজ সেই দিন, মানে আজ ২২ জুলাই আম দিবস।
আমের জন্মস্থান নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। বৈজ্ঞানিক ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’ নামের এ ফল ভারতীয় অঞ্চলের কোথায় প্রথম দেখা গেছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের এ জনপদেই যে আমের আদিবাস- এ সম্পর্কে আম বিজ্ঞানীরা একমত।
জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশের পর ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আফ্রিকায় আম চাষ শুরু হয়। এরপর ১৬ শতাব্দীতে পারস্য উপসাগরে, ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডের কাচের ঘরে, ১৭ শতাব্দীতে ইয়েমেনে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে আম চাষের খবর জানা যায়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়। এভাবেই আম ফলটি বিশ্ববাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মোগল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙায় এক লাখ আমের চারা রোপণ করে উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আম বাগান সৃষ্টি করেন। আমের আছে বাহারি নাম বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জেই পাওয়া যায় প্রায় ৩০০ জাতের আম। তবে অনেকগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।
বিশ্বে বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন আম উৎপাদিত হয়। আম প্রতিদিনের দরকারি ভিটামিন ‘সি’ শতভাগ সরবরাহ করে। এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন 'এ'।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমে প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা ফলে (আহারোপযোগী) আমিষ ১ গ্রাম, শর্করা ২০ গ্রাম, চর্বি ০ দশমিক ৭ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০ দশমিক ৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-'বি১' ০ দশমিক ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-'বি২' ০ দশমিক ০৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-'সি' ৪১ মিলিগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি রয়েছে ৯০ কিলোক্যালরি।