ফ্রেব্রুয়ারি মাস এলেই যেন বাড়তি হাওয়া লাগে প্রেমের পালে। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিন অর্থাৎ বুধবার বিশ্ব মাতবে প্রেমে। ভালোবাসা দিবস ছাড়াও এই মাসে প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য রয়েছে আরও কিছু দিবস। আর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তো উদযাপিত হচ্ছে ভ্যালেন্টাইন উইক বা ভালোবাসার সপ্তাহ।
ভালোবাসার সপ্তাহের প্রতিটি দিনেই প্রেমিক যুগলের জন্য রয়েছে কোনো না কোনো দিবস। তারই ধারাবাহিকতায় আজ অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে “হাগ ডে” অর্থাৎ আলিঙ্গন দিবস।
পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসার আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম আলিঙ্গন। তবে, আলিঙ্গন যে শুধু ভালোবাসার মানুষকেই করতে হবে তেমনটা নয়; পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গেই আলিঙ্গন করা উচিত। কারণ, আলিঙ্গেনের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারও রয়েছে।
বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, স্নেহপূর্ণ আলিঙ্গনসহ অন্যান্য সহানুভূতিশীল অযৌন শারীরিক স্পর্শ আমাদের মানসিক উত্তেজনা, উদ্বেগ, ভীতি, অবসন্নতা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। যখন কারও মন খারাপ থাকে বা কেউ কোনো মানসিক পীড়ার মধ্যে থাকে, তখন তার একটু বেশি সহানুভূতি ও ভালোবাসার প্রয়োজন হয়।
সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই অন্যকে আলিঙ্গন করে থাকি। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে অনেক সময় খুব সাধারণ একটি আলিঙ্গন বহু দিনের পুরনো কষ্ট এবং হতাশা দূর করে দেয়।
মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, আলিঙ্গনের এমন প্রভাব রয়েছে যা একজন ব্যক্তির মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। হতাশা এবং কষ্ট ভুলিয়ে মনকে শান্ত করে দিতে পারে।
আলিঙ্গন একজন মানসিকভাবে বিচলিত মানুষের নার্ভাস সিস্টেমকে ধীরে ধীরে শান্ত হতে সহায়তা করে। আলিঙ্গন এক ধরনের সাইকোথেরাপির মত কাজ করে যা আমাদের পূর্ণতা এবং সন্তুষ্টির অনুভূতি দেয়। আলিঙ্গন একজন মানুষকে যেকোনো ধরনের মানসিক ও শারীরিক পীড়ার ক্ষেত্রে যত্নশীলতার অনুভূতি দেয়। ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষের মনের ওপর এই প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়।
শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিভাবকেরা সন্তাদের যেকোনো কথা বোঝানো বা শারীরিক ও মানসিক কষ্ট ভোলানোর জন্য আলিঙ্গন করেন। আবার বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ভালবাসা পূর্ণ আলিঙ্গন তাদের ভরসা যোগায়, হতাশা দূর করে। অনেক মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রোগীদের চিকিৎসা ভীতি ও হতাশা দূর করতে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য তাদের আত্মীয় স্বজন এবং কাছের লোকদের এ ধরনের সহানুভূতিশীল স্পর্শের পরামর্শ দেন।
তবে এ ধরনের আলিঙ্গনের জন্য মনস্তত্ত্ববিদরা কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তাদের মতে, একটি আলিঙ্গন তখনই একজন মানুষের চিত্তকে শান্ত করতে পারে এবং মানসিকভাবে সব চাপ মুক্ত করতে পারে যখন সেটি সম্পূর্ণভাবে স্নেহশীল এবং সহানুভূতিশীল হয়। আলিঙ্গন প্রদানকারী ব্যক্তির সম্পূর্ণ মনোযোগ আলিঙ্গনকৃত ব্যক্তির মানসিক অবস্থার দিকে থাকতে হবে। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি আত্মিক যোগাযোগ যা দুজন মানুষের মধ্যে মানসিক ভাবের আদান প্রদানের কাজ করবে। তাকে বোঝাতে হবে যে তার মানসিক সুস্থতা সব থেকে বেশি জরুরি।
আলিঙ্গন একটি শারীরিক প্রক্রিয়া হলেও এর প্রভাব সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক। এটি একজন ব্যক্তির মাঝে পুনরায় আস্থা, বিশ্বাস এবং নির্ভরতা ফিরিয়ে আনতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই একটি আলিঙ্গন ব্যক্তির একাকীত্ব দূর করতেও সক্ষম। তার চিন্তাশক্তি এবং আচার আচরণও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
আমাদের মস্তিষ্ক সব সময় বাস্তবের প্রতিই সাড়া দেয় এমন নয়; বরং যখন একজন মানুষ কল্পনা করে যে তিনি মোটেও একা নন এবং তার মাঝে সব কিছু পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি আছে, তখন তার মস্তিষ্ক সেটিকে বাস্তব হিসেবে পরিগণিত করে শরীরে সেভাবে প্রতিক্রিয়া পাঠায়। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ব্যক্তি পুনরায় মানসিক শক্তি ফিরে পায় এবং তার আচার আচরণে পরিবর্তন আসে।
একজন মানুষের সব থেকে বেশি প্রয়োজন তার কাছের মানুষদের সাহচর্য, ভালবাসা এবং সহানুভূতি। যেকোনো সমস্যায় একজন মানুষ যদি তার মনের জোর ধরে রাখতে পারে তাহলে তার পক্ষে সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হয়ে যায়। আর আলিঙ্গন মানুষের মনস্তত্ত্বে ঠিক এই ইতিবাচক পরিবর্তনটিই নিয়ে আসে।