পদ্মা সেতু প্রকল্প নতুন এক মাইলফলক পূরণ
করছে আজ সোমবার (২৩ আগস্ট)। আজই সেতুতে শেষ স্ল্যাব বসানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর
মাধ্যমে সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করার ক্ষেত্রে বাকি থাকবে শুধু পিচঢালাই। প্রকল্প
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পিচঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে আগামী অক্টোবর মাসের শেষ
দিকে। এ কাজে তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর
ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সেতু বিভাগকে জানিয়েছে, তারা আগামী ৩০ এপ্রিলের
মধ্যেই সব কাজ শেষ করবে।
সব মিলিয়ে আগামী মে মাসেই পদ্মা সেতু যানবাহন
চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব। তবে সেতু বিভাগ জানিয়েছে, দিনক্ষণ ঠিক করা হবে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পর।
পদ্মা সেতুতে গত বছরের ডিসেম্বরে সর্বশেষ
ইস্পাতের অবকাঠামো (স্প্যান) বসানোর পর মাওয়া ও জাজিরার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। এরপর
কংক্রিটের স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে পুরো ভৌত কাঠামো। স্ল্যাবের ওপরে
পিচঢালাইয়ের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের পথ তৈরি করা হয়।
পদ্মা সেতুতে গতকাল রবিবার (২২ আগস্ট)
সন্ধ্যা পর্যন্ত ২ হাজার ৯১৭টি কংক্রিটের স্ল্যাবের মাত্র ৬টি বসানো বাকি ছিল। রাতের
মধ্যেই ৫টি স্ল্যাব বসানোর কথা। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেষ স্ল্যাবটি বসানো
হবে আজ সকালে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল
ইসলাম বলেন, স্ল্যাব বসানো হলে সেতুর সাইড ওয়ালের কাজে বেশিসংখ্যক জনবল যুক্ত করা হবে।
এখন প্রকল্পের কাজে বড় কোনো বাধা নেই। জুনের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, পিচঢালাইয়ের জন্য
যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ। তবে বর্ষা মৌসুমে কাজটি করা হবে না। শুরু হবে অক্টোবরের শেষ
দিকে। স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে যে কংক্রিটের পথ তৈরি হবে, তার ওপর প্রথমে দুই মিলিমিটারের
পানিনিরোধক একটি স্তর বসানো হবে। এটি ‘ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন’ নামে পরিচিত,
যা অনেকটা প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের মতো। এর ওপর কয়েক স্তরের পিচঢালাই হবে। সব মিলিয়ে
পুরুত্ব হবে প্রায় ১০০ মিলিমিটার।
সেতুর দুই পাশের সাইড ওয়াল ও মাঝখানের
সড়ক বিভাজক বসানোর কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত সাইড ওয়াল বসানো হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এর
বাইরে সেতুতে সড়কবাতি বসানোর খুঁটিসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা মূল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত
প্রতিবেদন অনুসারে, গত জুলাই পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশের কিছু
বেশি। মূল সেতুর কাজ হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ।
সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে,
আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। এরপরও প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর
থাকবে। তবে সে সময়টা সেতুর কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামত ও ঠিকাদারের পাওনা মেটানোর
জন্য নির্ধারিত।
পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট। এর ওপর দিয়ে
চলাচল করবে যানবাহন, নিচ দিয়ে রেল। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সেতুটি
চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণের মানুষ এখন সেতুটি
চালুর অপেক্ষায়।
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন
বলেন, ‘কাজ শেষ হলে যত
দ্রুত সম্ভব পদ্মা সেতু চালু করে দেওয়া উচিত। আমরা বহু বছর ধরে এর অপেক্ষায়। সেতুটি
চালু হলে প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে বাড়ি যাব।