আজঃ সোমবার ২৯ মে ২০২৩
শিরোনাম
প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে নির্মিত

আজও মোগল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করছে বজরা শাহী মসজিদ

প্রকাশিত:সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
নোয়াখালী প্রতিনিধি

Image

প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে নির্মিত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ঐতিহাসিক বজরা শাহী মসজিদ আজও মোঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করে চলছে। অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ, বিভিন্ন রঙের পাথর চীনা মাটির তৈরি তৈজসপত্রের খন্ডিত অংশের ব্যবহার এই মসজিদটিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলেছে।

ঐতিহাসিক বজরা শাহী মসজিদ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিঃমিঃ উত্তরে এবং ঢাকা-নোয়াখালী পাকা রাস্তা থেকে ৩শ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত। প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে মোঘল মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালে তাঁর নির্দেশে ও অর্থে মিয়া আম্বর শাহেবের সহযোগিতায় জমিদার আমান উল্যা খান কর্তৃক ১৭৪১ সালে দিল্লির শাহী মসজিদের অনুকরনে নির্মিত হয় বজরা শাহী জামে মসজিদ।

মসজিদের বহুভাঁজ খিলানোর কোনায় ফুল ও নকশা, আয়তকার খোপের মধ্যে খিলান নকশা, আয়তকার উপরিভাগে পাতা নকশা, পাতার নকশার ওপরে দড়ির মতো উদগত গোলাকার বাঁধনের খোপে ফুল ও লতার নকশা রয়েছে। এছাড়া দরজায় আয়তকার খোপের ওপর তারা ও বরপি নকশা, টারেটর গায়ের জেব্রক্রসের মতো নকশা বিভিন্ন রঙের পাথর ও তৈজসপত্রের খন্ডিত অংশের সংমিশ্রণে করা হয়েছে। গম্বুজের গায়ে চাঁদ তারা ও পাখা নকশা ছাড়া গম্বুজের একবারে ওপরের দিকে পদ্মের পাঁপড়ি নকশা ও লম্বা চূড়াতে কলসির মতো ধাতব বস্তু স্থাপন করে গম্বুজগুলোকে আর আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। অষ্টভূজাকৃতি কর্ণার টাওয়ারে মোটা দড়ির মতো বাঁধনের সাহায্যে ঘুর্ণয়মান আয়তাকার খোপ নির্মাণ করে প্রত্যেক বাহুর খোপের ভিতরে অন্ধখিলান( ব্লাইন্ড আর্চ) নকশা, খিলানের ভিতরে বিভিন্ন প্রকারের ফুলদানি নকশা, তারা নকশা দিয়ে অলঙ্কৃত করা হয়েছে। চত্বরে সামনের দিকে প্রধান ফটেকের দুপাশে ও মিনারের মসজিদের মতো বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার ছাড়াও ডোরা কাটা নকশা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। অভূতপূর্ব স্থাপত্যকলায় নির্মিত এই মসজিদ পরিদর্শন করতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ এই মসজিদে আসে। এছাড়া মহিলারা যাতে পর্দ্দার সহিত নামাজ পড়তে পারে তার জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। মহিলাদের পাশাপাশি মেয়ে শিশুরাও নামাজ পড়তে আসে।

মসজিদটি ১৬ দশমিক ৪৫ বাই ৮ দশমিক ০৯ মিটার। মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি পাথরের দরজা আছে। মধ্যবর্তী প্রধান দরজাটি তুলনামুলকভাবে বড়। এর সম্মুখভাগ তিনটি অংশে বিভক্ত। মসজিদের মধ্যবর্তী স্থানের দেয়াল সামনের দিকে বাড়ানো। এই বাড়ানো দিকের মধ্যবর্তী অংশে ২ দশমিক ১৩ মিটার প্রশস্ত অর্ধবৃত্তাকৃতি ১টি বহৃভাজ খিলান রয়েছে। মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের দুদিকে দুটি দরজা প্রধান প্রবেশ পথের মতো হলেও ছোট আকৃতির। দরজায় উপরিভাগে আয়তকার খোপের মধ্যে সাদা পাথর বা চীনা মাটির তৈরি আরবী বর্ণমালার লেখা লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুলল্লাহ

মসজিদটি তৈরির ১৭৭ বছর পর ১৯০৯ সালে একবার মেরামত করা হয়। মসজিদের ঘেরার মধ্যে দক্ষিণ পূর্ব কোণে আমান উল্যাহ ও সানা উল্যাহ ভ্রাতৃদ্বয় এবং তাদের মায়ের কবর রয়েছে। বাদশা শাহ-এর একান্ত আগ্রহে মক্কা শরীফের বাসিন্দা তৎকালীণ অন্যতম শ্রেষ্ঠ বুজর্গ আলেম হযরত মাওলানা শাহ আবু বকর সিদ্দিকী সাহেব অত্র মসজিদের সর্বপ্রথম ও প্রধান ইমামের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার বংশের পরবর্তী পুরুষগনই যোগ্যভিত্তিক তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে অধ্যবধি ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছে। ৭ম ইমাম হাছান সিদ্দিকী বর্তমানে ইমামের দায়িত্বে রয়েছেন।


আরও খবর