দেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে তিনি বলেন, সুশৃঙ্খল-শক্তিশালী দল রয়েছে বলেই তাঁর সরকার দেশের উন্নয়ন করতে পারছে
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ তো হীরার টুকরা। যতবার কেটেছে ততবার আরও নতুন করে জ্যোতি ছড়িয়েছে। কাজেই এ সংগঠনকে ধ্বংস করার যে যতই চেষ্টা করুক, সেটা পারেনি, পারবে না।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে তিনি বলেন, সুশৃঙ্খল-শক্তিশালী দল রয়েছে বলেই তাঁর সরকার দেশের উন্নয়ন করতে পারছে। অগ্রাধিকার তালিকায় যারা দুই ডোজ করোনার টিকা নিয়েছেন তারাই এখন সমালোচনা করছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এ আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা জানান, দেশের সব সংগ্রাম আর উন্নয়ন-অগ্রগতিতে দলটির অবদানের কথা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর হাতে আওয়ামী লীগ কিভাবে সুসংগঠিত হয়ে ধীরে ধীরে দেশের স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যায় তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বরাবরই দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে তাঁর দল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা তখন অনেকে জেলে, আবার বেইমানি করে অনেকে যোগ দেয় মোস্তাকের সাথে। কার সাথে যোগাযোগ করব? জেল থেকে বের হওয়ার পর অনেকে যোগাযোগ করে। তখন আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, এ বাংলাদেশকে আমার বাবা যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর যে স্বপ্ন, তাঁর যে চিন্তা, তাঁর যে আদর্শ, এটা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। কিন্তু এটাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নাম মুছতে চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, মুসলিম লীগ তখন ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছে, সেও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসেছে, সেও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।
জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, যখন ৭১ সালে গণহত্যা চালায়, তখনো লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। জেনারেল এরশাদ এসেও একই পথ অনুসরণ করেছে। আর খালেদা জিয়া এসে তো আরও এক ধাপ ওপরে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ৯১ থেকে ৯৬ আর ২০০১ থেকে ২০০৬, কত মানুষকে তারা হত্যা করেছে! তাদের লক্ষ্য একটাই, আওয়ামী লীগকে শেষ করা। আবার যখন ইমার্জেন্সি দেওয়া হলো তখন আমাকেই অ্যারেস্ট করা হলো, কিন্তু কেন?
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশে গরিব-দুঃখী মানুষ তারা পেটে ভাত পায়, তারা মাথা গোজার ঠাঁই পায়, ঘর পায়, লেখাপড়ার সুযোগ পায়, এটা মনে হয় কিছু শ্রেণির মানুষের পছন্দ হয় না। সে জন্য আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আমি আগেই বলেছি এ সংগঠন মাটি ও মানুষের থেকে উঠে এসেছে। এটা কোনো ক্ষমতা দখলকারীর সংগঠন না। মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এ সংগঠন উঠে এসেছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে। যে সংগঠন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠে, সেই সংগঠনকে এতো সহজে শেষ করে দেওয়া যায় না। হয়তো সাময়িক আঘাত আসে। আওয়ামী লীগের ওপর অনেক আঘাত আসছে। বহুবার আওয়ামী লীগ ভেঙে গেছে। আওয়ামী লীগের ভেতরের লোকেরাই তো আওয়ামী লীগকে ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, তিনি সবার আগে আওয়ামী লীগ ভেঙে চলে গেলেন ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টি করতে। ঠিক এভাবে কত বার আওয়ামী লীগ ভেঙেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮১ সালে আমার অবর্তমানে সভাপতি নির্বাচিত করা হলো আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য। আমি প্রবাসে থাকতে যাকে বেশি সহযোগিতা করেছি তিনি আমাকে ছেড়ে সবার আগে চলে গেলেন, আমাদের আবদুর রাজ্জাক সাহেব। বারবার বললাম, আপনার যাওয়ার দরকার নাই, আপনি থাকেন। পার্টির সেক্রেটারি আপনি, থাকেন। না, সে পার্টি ভেঙে বাকশাল করল। এরপর ড. কামাল হোসেন যাকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করালাম, তাঁর নাম-ডাক হলো, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বলে তাঁকে প্রচার করলাম। তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটের একজন মন্ত্রীর ছিলেন মাত্র, আমরা প্রচারের মাধ্যমেই তুলে ধরলাম তাঁকে, যিনি ভালো করে বাংলায় কথাও বলতে পারতেন না, তিনি ৯১ সালে পার্টি ভেঙে চলে গেলেন, আরেকটা পার্টি বানানোর চেষ্টা করলেন। প্রথমে আওয়ামী লীগেরই একটা করার চেষ্টা করলেন, পরে গণফোরাম করে চলে গেলেন। এভাবে বার বার আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে। তবে আমি বলব, আওয়ামী লীগ তো হীরার টুকরা। যতবার কেটেছে, ততবার আরও নতুন করে জ্যোতি ছড়িয়েছে। কাজেই এ সংগঠনকে ধ্বংস করার যে যতই চেষ্টা করুক, সেটা পারেনি, পারবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সব ভাবে বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।