প্রকৃতিতে যখন মাঘের হাওয়ার শীতের কাঁপন
চলছে। তখন শীত ভেদ করে পাতার ফাঁকে ফাঁকে এখন শতে শতে দেখা মিলছে আমের স্বর্ণালী মুকুলের।
ইতিমধ্যে মৌ মৌ ঘ্রাণ ছড়াতেও শুরু করেছে প্রকৃতিতে।
রোদ-কুয়াশার লুকোচুরির মধ্যেই বরগুনার
৪নং ইউনিয়নের কোটবাড়িয়া গ্রামের এ্যাড. সোহরাব এর আমের বাগানের প্রকৃতি সাজাতে স্বর্ণালী
মুকুল প্রষ্ফুটিত হচ্ছে গাছে গাছে। তিনি এরই মধ্যে বাগান পরিচর্যায় নেমে পড়েছেন। এবার
অনেক গাছে আগাম মুকুলের দেখা মিলছে। এতে সে এবং তার পরিবার সহ তার কমর্চারিরাও ভীষণ
খুশি।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুম
শুরুর আগে গাছে মুকুল আসা তেমনটা ভালো নয়। কারন আগেভাগে মুকুল আসায় কুঁয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত
হতে পারে। তবে গাছে গাছে আগাম মুকুলে বাগানের মালিক সোনাখালী এলাকার নাসির উদ্দিন,
ও অন্যান্য চাষিরাও খুশি।
শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চান্দখালী,
লাকুরতলা, বুড়িরচর, সোনাখালী, কোটবাড়িয়া, আদম দরবার এলাকায় অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট আম গাছে
মুকুল আসতে শুরু হয়েছে। কিছু কিছু গাছে মুকুলে ছেয়ে গেছে গাছ। সোনারাঙা সেই মুকুলের
সৌরভ ছড়াচ্ছে বাতাসে। প্রজাপতি, মৌমাছি মধু সংগ্রহে ব্যাস্ত হয়ে পরছে। অন্যদিকে মুকুল
আসা শুরুর পর থেকেই বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাগানের মালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
আম চাষি ও বাগান মালিকরা বলছেন, মাঘের
মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল দেখে তারা বুঝছেন, আমের মৌসুম এসে গেছে। বাগানের গাছগুলোর যত্ন
নিতে পরিশ্রম শুরু করে দিয়েছেন। ভালো ফলনের আশায় জোরেশোরে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা।
আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার গাছগুলোতে মুকুলের সমারোহ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বড় ধরনের
কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে।
বরগুনা অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ জাতের আম চাষ
হয়ে থাকে। আর সারা বাংলাদেশে রয়েছে ২’শ ৫০ জাতের। এর
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফজলী, গোপাল ভোগ, মোহন ভোগ, ন্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর,
কৃষাণ ভোগ, মল্লিকা, লক্ষণা, আম্রপলি, দুধসর, দুধকলম, বিন্দাবনী, আরজান, রাণী পসন,
মিশ্রীদানা, সিঁন্দুরী, আশ্বিনা সেই সঙ্গে নানা প্রকার গুটি আম।
বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের
কোটবাড়িয়া আদম দরবার এলাকার এ্যাড. সোহরাব হোসেন মামুন আম চাষি জানান, তার একটি আম
বাগান রয়েছে। অধিকাংশ গাছেই মুকুল দেখা দিয়েছে। তাও খুব সামান্য। সম্ভাব্য মুকুলের
মাথাগুলোকে পোকা মাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। তবে কিছুদিন থেকে
ঘন কুয়াশার কারনে মুকুল কিছুটা নষ্ট হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এবার শেষ সময়ে শীতের
প্রকোপ থাকার পরেও আমের মুকুল এসেছে। তাদের ভাষ্য, জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে অপেক্ষাকৃত
উষ্ণ এলাকায় কিছু কিছু গাছে আগাম মুকুলের দেখা মিলেছে। ফাল্গুনের শুরুতেই এবার শতভাগ
গাছেই প্রষ্ফুটিত হবে মুকুল। আর এক সপ্তাহের মধ্যে পাল্টে যাবে আম বাগানের চেহারা।
তখন গাছে গাছে দেখা মিলবে শুধু মুকুল আর মুকুল। স্বর্ণালী মুকুলের সুবাসিত গন্ধে মুখরিত
হবে বরগুনা। তার আভাস এখনই পাওয়া যাচ্ছে বরগুনার প্রকৃতিতে। তাই আম প্রধান এই অঞ্চলের
মানুষের এখনই সময় কাটটে শুরু করেছে আম গাছ ও মুকুলের যত্নআত্তি নিয়েই।
এদিকে এরইমধ্যে মুকুলের উকিতে গাছে গাছে
প্রজাতির, মৌমাছির গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে
তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাই চলছে মৌমাছি আর ভ্রমরের সুর-ব্যঞ্জনা। বছর
ঘুরে আবারও তাই ব্যাকুল হয়ে উঠেছে আম চাষিদের মন।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও
চাষ হয়ে থাকে নানা জাতের আম। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই আম চাষের জমি বাড়ছে বরগুনায়। কৃষি
বিভাগ জানায়, আমের ফলন নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের
বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিকরাও।
বরগুনা সদর উপজেলার বেতাগী উপজেলার আমবাগান মালিক অ্যাড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাগানে কিছু
ড়কিছু গাছে মুকুল দেখা দিয়েছে। তবে ২০-২৫ দিনের মধ্যে সব গাছে মুকুল চলে আসবে।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক
আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, ‘এখনও পুরোদমে
গাছে মুকুল আসেনি। তবে কিছু কিছু গাছে এসেছে। এ সময় পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু
আমাদের সাধারণ চাষিদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান অতি মুনাফার লোভে অতিরিক্ত
রাসায়নিক ও হরমোন প্রয়োগ করাচ্ছে। এতে আমের গুণগত মান ঠিক থাকছে না।