চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি
বাজার দাম ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি থাকলেও প্রশাসন কোনো অভিযানে নামেনি। এ ছাড়া আমদানিকারকরা
বিকল্প উৎস থেকেও পেঁয়াজ আনেনি। এর পরও পেঁয়াজের কেজি অর্ধেকে নেমে এখন ৪৫ থেকে ৫৫
টাকা। তবুও ক্রেতা নেই।
এদিকে ঢাকার খুচরা বাজারেও সপ্তাহের ব্যবধানে
পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) খুচরায় প্রতি কেজি
দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ৮০ থেকে ১০০
টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পাইকারি বাজারে গতকাল এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা
কেজি।
ঢাকার পাইকারি কারওয়ান বাজারের আড়তদার
জালাল বলেন, ‘পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। আজ
(মঙ্গলবার) আমরা পাইকারিতে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি।’
হঠাৎ করে দাম কমার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা
যায়, রোজার আগে থেকে অনেক আড়তদার পণ্যটি মজুদ করেছিলেন বলে তথ্য দিয়েছেন ব্যবসায়ীরাই।
এখন আমদানির খবর পেয়ে তারাই অতিরিক্ত লোকসানের ভয়ে কম দামে পণ্যটি ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা দাবি করেছেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। এটি মজুদ করা সম্ভব নয়। এখন
দেশি পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ হওয়ায় দাম কমছে।
গত ৭ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ
রাখার ঘোষণার পর অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার। রাতারাতি খাতুনগঞ্জেই কেজিপ্রতি
ভারতীয় পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ২০০ টাকায়। পুরোনো এলসির প্রায় পাঁচ হাজার টন পেঁয়াজ আসায়
গত ২২ ডিসেম্বর খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ১৭০ টাকা।
এরপর ভারত থেকে বৈধ পথে আর কোনো পেঁয়াজ
দেশে আসেনি। এখন আড়তগুলোতে যেসব ভারতীয় পেঁয়াজ দেখা যাচ্ছে সবটাই চোরাইপথে আসা।
চলতি বছরের শুরুতে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি
বিক্রি হয়েছিল ১৩০ টাকা পর্যন্ত। এরপর দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এলে ১০০ টাকার নিচে
চলে আসে পেঁয়াজের কেজি। ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে
৮০ থেকে ১০০ টাকা। মার্চের ১৫ তারিখ থেকে ক্রমাগত এক-দুই টাকা করে কমতে থাকে দাম। সর্বোচ্চ
গত সোমবার দাম নেমে আসে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
মঙ্গলবার সকালে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তে
গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ আড়ত দেশি পেঁয়াজে ভর্তি। কিছু ভারতীয় পেঁয়াজও আছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স আলম অ্যান্ড সন্সের
কর্ণধার কবির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে
পেঁয়াজের বাজার উঠানামা করছে। গত সোমবার হঠাৎ দাম অর্ধেক হয়ে যায়। তখন দেশি পেঁয়াজ
৪০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। আজকে (মঙ্গলবার) আবার বেড়ে গেছে।
দেশি পেঁয়াজ ৫০ আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ
বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। এখন পর্যাপ্ত
সরবরাহের কারণে দামও অর্ধেক কমেছে। তবে ক্রেতা নেই।
এদিকে চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে পেঁয়াজ
বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। ভ্যানগাড়িতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। ভ্যানগাড়ির
পেঁয়াজ বিক্রেতা আবদুর রহিম জানান, দেশি পেঁয়াজ ছোটগুলো ৫০ টাকা আর আকারে বড়গুলো ৬০
টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
দাম কমে আসার কারণ হিসেবে খাতুনগঞ্জের
একাধিক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, অনেক আড়তদার আছেন; যারা কৃষকের কাছ থেকে পেঁয়াজ
কিনে মজুদ করেছিলেন। তারা যখন দেখতেছেন এপ্রিলেই দেশে ভারতীয় পেঁয়াজ চলে আসবে, তখন
অতিরিক্ত লোকসান হবে। সেই ভয়ে সংগ্রহে থাকা পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ছেন। ফলে চাহিদার চেয়ে
অতিরিক্ত পণ্য বাজারে থাকায় দাম কমছে।
তবে মজুদ করার বিষয়টি মানতে নারাজ খাতুনগঞ্জের
হামিদুল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পেঁয়াজের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস।
তিনি বলেন, এখন কৃষকরা নতুন পেঁয়াজ বিক্রির জন্য তুলতে শুরু করেছেন। ক্ষেত থেকে টন
টন পেঁয়াজ আসছে আড়তে। আড়তগুলোতে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ বেশি। তাই দাম কমছে। এটি পচনশীল
পণ্য। আড়তদারদের মজুদ করার সুযোগ নেই।