অবশ্যই সেটা জাতির ও প্রজন্মের পর প্রজন্মের জানা দরকার। যে চক্রান্ত আমাদের স্বাধীনতা চেতনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছিল ও রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। সেটা জাতিকে জানতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত
হত্যাকারীদের বিচার করা হয়েছে। এখন তদন্তের পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার সময়
হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক কিছু জানেন তিনি, সব শোক বুকে নিয়ে
নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছেন বলে সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।
আজ বুধবার জাতীয়
সংসদে ১৪৭ বিধির ওপর চলা সাধারণ আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘পঁচাত্তরের খুনি
চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনো ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে
পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের ঢাকাকে ঘুরিয়ে দিতে এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব চক্রান্ত ব্যর্থ করার শপথ নিয়ে জাতীয় সংসদে সাধারণ প্রস্তাব
উঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির
চৌধুরী এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।’
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের
বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দল গঠন করে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন
প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমিতো সকলকেই নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছি।
কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নিতে যায়নি। বিচারে বিশ্বাস করি, বিচারের মধ্যে দিয়েই
চলেছি। আমার একটাই লক্ষ্য যত শক্তি, যা আছে, প্রতিশোধ নেওয়া না।’
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ‘দেশের মানুষের
জন্য কাজ করে যাব। আমার বাবাকে হত্যা করে যে মানুষগুলোর ভাগ্য ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।
সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন এবং সুন্দর জীবন দেওয়াই আমার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে
আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন,
‘এইটুকু দাবি করতে
পারি, পর পর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে অন্তত কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যার সুফলটা
দেশের মানুষ পাচ্ছে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করা বড় পাওয়া।’
যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে
জড়িত, এদের বিচার হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকের বিচারের
রায় কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এই চক্রান্ততো শুধু হত্যাকাণ্ড না, এই চক্রান্ত রাষ্ট্র,
স্বাধীনতা এবং আদর্শের বিরুদ্ধে। তাই এর পেছনে কারা, সেটাও খুঁজে বের করার সময় এসেছে।
আমি মনে করি আমরা শেষ করে যেতে পারব কিনা? কিন্তু একদিন না একদিন সেটা নিশ্চয়ই বের
হবে, প্রকাশ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, অবশ্যই সেটা জাতির ও প্রজন্মের পর প্রজন্মের জানা দরকার। যে চক্রান্ত আমাদের
স্বাধীনতা চেতনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছিল ও রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। সেটা জাতিকে
জানতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন,
‘তবে, হ্যাঁ জানি
অনেক কিছু। কিন্তু আমিতো বলেছি সব কষ্ট, সব ব্যথা, সবকিছু ধারণ করে। সব শোক বুকে নিয়েই
আমার পথ চলা। আমিতো নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছি। আমি অনেক জানি, বলতে পারব না, বলি না। কারণ
আমার একটাই লক্ষ্য আগে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাব। সেটাই সার্থকভাবে যখন করতে পারব,
তখনই আমার অনেক কিছু বলার সুযোগ আসবে।’
করোনা ভাইরাসের
পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে বলে জানান
প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে জানি না।’
বুধবার অর্থসচিবের
সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে কীভাবে কাজ করব, মানুষকে
ভালো রাখতে পারব, সহায়তা দেব। সেটাই চিন্তা করি সব সময়।
যাত্রাপথ সহজ
ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বারবার আঘাত,
মৃত্যুর মুখোমুখি। আল্লাহ আমাকে এই শক্তি দিয়েছিল, আমার কোন ভয় ছিল না। একটা আত্মবিশ্বাস
ছিল মরতেতো একদিন হবেই। মরার আগে মরতে রাজি ছিলাম না। আমার সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। গণতন্ত্র
ফিরিয়ে এনেছি। ২০০৯ সাল থেকে পর পর তিনবার ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল
দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের
যতই কাজ করি, কিছু লোকতো আমাদের পেছনে লেগে আছে। কোনো কিছুতেই ভালো দেখে না। একটা মিথ্যা,
অপপ্রচার চালাবেই তারা। আজকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে। কালকের ভাষণে বিস্তারিত বলেছি।
শুধু এইটুকু বলব যেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার বলছে, বাংলাদেশ কোনো অর্থনৈতিক
ঝুঁকিতে নাই। সেখানে আমাদের দেশের কিছু মানুষ অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার
চেষ্টা করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন,
‘বাংলাদেশে সার্বিক
মুদ্রাস্ফীতি ৬ দশমিক ৪ ভাগ বা ব্যাক টু ব্যাক ৭ দশমিক ৪। কারণ খাদ্যমূল্য বেশি। কিন্তু
ওইটুকুতো এখনো আমরা ধরে রাখতে পারছি। আজকে মানুষের ঘরে অন্তত খাবার আছে। সেই ব্যবস্থা
করেছি। কারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, এটাই আমাদের কাজ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ যেখানে সারা বিশ্বের কাছে সম্মান পাচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশের ভেতরে কিছু লোক বাংলাদেশকে অসম্মান করার জন্য মিথ্যা অপপ্রচার করে করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটাই সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আমাদের। মনে হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী এবং ১৫ আগস্টের খুনিদের প্রেতাত্মারা এখনো সক্রিয়।’