কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বার বার প্রতারণার
শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন আলোচিত সেই জল্লাদ শাহজাহান। পাশাপাশি বিয়ে করে তিনি
সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন।
সোমবার (১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের
মাওলানা আকরম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। স্ত্রী ও শাশুড়ির
কাছে জল্লাদ শাহজাহানের প্রতারণার বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টাইমস পিআর।
শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘মানুষের বেঁচে
থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা- এগুলোর কোনোটাই
আমি পাচ্ছি না। আমি আমার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।
আমার মা-বাবা নেই, দায়িত্ব নেওয়ার মতো ভাই-বোন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিত্তবানদের
কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমাকে থাকার ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিন। আমি চরম অর্থনৈতিক
সংকটে আছি। আমার কাজ করার মতো ক্ষমতা নেই, আয়-রোজগার নেই, অর্থের জোগান নেই, নিজের
থাকার জায়গা নেই।’
তিনি বলেন, ‘৪৪ বছর কারাভোগ
শেষে এখন এসে আমি বাইরের মানুষদের বুঝতে পারছি না। যেখানে যাচ্ছি, প্রতারণার শিকার
হচ্ছি। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিয়ে করে সেখানেও সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। বিয়ের কাবিন
৫ লাখ টাকা হলেও ১০ লাখ টাকা দেনমোহর লিখিত দিয়ে আমার স্ত্রী সাথী আক্তার ফাতেমা ৫৩
দিনের মাথা পালিয়ে যায়। পালিয়ে গিয়ে আমার নামে যৌতুকের মামলা দিল, আমি মামলা দিতে
গেলে বউয়ের নামে মামলা হয় না কোনো। আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।’
শাহজাহান বলেন, ‘পরে আইনজীবীর
সহায়তায় গতকাল রবিবার আদালতে আমার স্ত্রী ও শাশুড়িসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
এখানে যাদের আমি আসামি করেছি তারা এই কাবিনের স্বাক্ষী, তারা এই যৌতুকের টাকা নেওয়ার
স্বাক্ষী, তারা এই ১০ লাখ টাকা নেওয়ার স্বাক্ষী, ওদের (স্ত্রীর) আত্মীয়রাই এখানে
(আসামির তালিকায়)।’
তিনি বলেন, ‘৪৪ বছর কারাভোগ
শেষে বাইরে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছি। কারাগারে থাকতেই ভালো ছিলাম। কারাগারের বাইরের
জীবন এত জটিল কেন? জীবন এত কঠিন হবে, জানলে কারাগারেই থেকে যেতাম। আমি কারাগার থেকে
বের হলে আমার ভাগ্নে নজরুল অটোরিকশা কিনে দেবে বলে টাকা মেরে দেয়।’
প্রতারণার শিকার হওয়ার আরেক উদাহরণ দিয়ে
দেশের আলোচিত এ জল্লাদ বলেন, ‘এরপর অনেক কষ্ট করে একটা চায়ের দোকান
দেই, আমার সঙ্গে যে ছেলেটি ছিল দোকানে আমার সঙ্গে সময় দিত। সে চার মাস থাকার পরে দোকানে
থাকা ৩০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায়।’
শাহজাহান বলেন, ‘আমি এখন উভয়সংকটে
জীবনযাপন করছি। একে তো আমার অচল অর্থনৈতিক অবস্থা, অন্যদিকে একজন নারী আমার জীবনের
শেষ জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে এবং আমাকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
অথচ আমার থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়েছে, যার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে ডাকাতি ও হত্যা মামলায়
দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে যান শাহজাহান। ২০০১ সালের আগে ১৯৮৮ সাল থেকে সহকারী জল্লাদ
হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তখন তার বয়স ৩০ এর কিছু বেশি।
৪৪ বছর কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান ভূঁইয়া। বর্তমানে তার হার্টের সমস্যা,
রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে।