বাংলাদেশের গণতন্ত্র
বেশ স্বচ্ছ। আমাদের দেশের সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ
গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। এ জন্য বাংলাদেশে ৭২ শতাংশের নিচে কখনো ভোট পরে না। বাংলাদেশে
নির্বাচন একটি উৎসব। যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়, জোর করে মানুষ আনতে হয় না। অন্যদের আমাদের
গণতন্ত্র শেখানো ঠিক হবে না।’ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে
নিজ কার্যালয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,
সদ্য প্রকাশিত মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনের জের ধরে এনজিও ও মার্কিন দূতাবাসের বাংলাদেশি
কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘এনজিওরা সব সময়ে বলে, বাংলাদেশ খারাপ।
আর মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বাংলাদেশি কর্মকর্তারা প্রাথমিক
খসড়া করে দিয়েছেন।’
সরকার সব দলকে
নির্বাচনে চায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সব দলই মোটামুটি নির্বাচনে আসে। কিন্তু একটি বড় দল রয়েছে
তারা জনসম্মুখে বলে, তারা নির্বাচন করবে না। কেউ যদি নিজ ইচ্ছায় নির্বাচন না করতে চায়…।
তারা জনগণকে ভয় পায়। কারণ তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জন্ম হয়নি। সেনানিবাসে তাদের
জন্ম। তারা ওই ধরনের জিনিস আশা করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন করেছেন, কেন তাদের
আনতে পারেন না। তখন আমি বলেছি, আপনি চাইলে নিয়ে আসেন। দেখেন আপনি পারেন কি না। আমাদের
এখানে সুযোগ সবার জন্য সমান। বাকি সব দল আসে, ওরা যদি না আসে আমি কী করব? তখন মার্কিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, না এলে তো আপনার কিছু করার নাই।’
ররাষ্ট্রমন্ত্রী
বলেন, ‘সিলেটের মেয়র হচ্ছে বিএনপির। আমি আওয়ামী
লীগের সংসদ সদস্য। যখন নির্বাচন হয়, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে ছিল। তিনি (রাষ্ট্রদূত)
দেখেছেন কত ভালো নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে। কোথাও কারচুপি হয়নি। হ্যাঁ,
এত বড় দেশ, কোথাও কোথাও কারচুপি হতে পারে। কিন্তু যেখানে কারচুপি হয়েছে সেখানে নির্বাচন
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশে স্বাধীন
ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবার গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে নতুন করে আমরা
নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করেছি। এ আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে স্বচ্ছ মানুষ নিয়োগ
দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সেই সরকার নির্বাচন করে। বাংলাদেশেও
সেই নিয়মেই হবে। দুনিয়ায় এভাবে হয়ে থাকে।’
বৈঠকে র্যাবের বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছ কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে বলেছি যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত (সাবেক) মরিয়ার্টি বলেছিলেন যে, র্যাব বাংলাদেশের এফবিআই। আর আপনারা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেন।’ র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কত সময়ে লাগতে পারে? এর উত্তরে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি সেটা বলতে পারব না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গণমাধ্যম দেখে কিছু তথ্য
পায়। আর কিছু এনজিও তথ্য দেয়। এনজিওরা সব সময়ে বলে, বাংলাদেশ খারাপ। আর একদল রয়েছে,
যারা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চায়, তাই বাংলাদেশের খারাপ চিত্র দিলে তাদের লাভ হয়। অনেক
বাংলাদেশি মার্কিন দূতাবাসে চাকরি করেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরাই এ খসড়া তৈরি করেন। তাঁরা
(মার্কিন দূতাবাসের বাংলাদেশি কর্মকর্তারা) খালি দোষ খোঁজেন। খালি দোষ খোঁজা আমাদের
বাঙালির চরিত্র।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি বলেছি,
গত ৫০ বছর আপনাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী।
দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় ৯০০ কোটি ডলার। আমরা চাই ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও উন্নত করতে।
এ সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরাও চাই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন
করতে। বাংলাদেশের খুব প্রশংসা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়ন করেছে, তা অনুকরণীয়।’
বঙ্গবন্ধুর খুনি
রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনা নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,
‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কোনো খুনিকে রাখতে
দিতে চায় না। বিষয়টিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এটি পররাষ্ট্র দপ্তরের
বিষয় নয়। তবে কার্যক্রম যাতে দ্রুত হয়, বিষয়টি দেখবেন। ২০০১ সালের তৎকালীন মার্কিন
সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে পাঠানোর। তবে সে সময়ে বাংলাদেশে যারা
নতুন সরকার গঠন করেছিলেন, তাঁরা বিষয়টি আটকে দিয়েছেন।’
ইউক্রেন ইস্যুতে
বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ তার নীতিতে রয়েছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।’