জীবনমুখী ও বাস্তবধর্মী গান দিয়ে আগেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। এখন সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে স্ট্যান্ডবাই সং শিরোনামের সিরিজ গান তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন আলোচনা তৈরি করেছেন। বলছি, কণ্ঠশিল্পী আমিরুল মোমেনীন মানিকের কথা। বাংলা গানের প্রচলিত ধারাকে ভেঙে দিয়ে ইতোমধ্যে তাঁর গাওয়া প্রথম স্ট্যান্ডবাই সং ‘মধ্যবিত্ত চুচু ভাই’ সাধারণ মানুষের জীবনযন্ত্রণার একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র শিল্পীর ভেরিফাইড ফেসবুকেই গানটি ১২ লাখ ভিউ অতিক্রম করেছে।
এছাড়া চলতি সময়ের নানা অসঙ্গতি নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে গেয়েছেন ‘বুগিজুগি বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড’, ‘উগান্ডাকে বলে দিয়েছি’,‘বাঘের কণ্ঠে শুনি বিড়ালের ডাক’, ‘সীমান্ত প্রহরী’, ‘লুঙ্গির স্বাধীনতা চাই’, ‘ভোর কী জানে সকাল কবে ?’, ‘বুকপকেটে বিপ্লব’, ‘ইডেন কলেজ’, ‘সুগার ড্যাডি’, ‘বা”চা হবে ডজন ডজন বউ হবেনা কেউ’ শিরোনামের গান। শিল্পীর নিজের লেখা ও সুর করা গানগুলো তাৎক্ষণিক ঘটনাকে সামনে রেখে তাৎক্ষণিক গাওয়া বলে তিনি নাম দিয়েছেন স্ট্যান্ডবাই সং। প্রত্যেকটি গান ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষ দেখেছেন এবং শিল্পীকে প্রশংসায় সিক্ত করেছেন। এ গানগুলো দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন কিংবদন্তি শিল্পী নচিকেতা। তিনি মানিককে লিখে দিয়েছেন নতুন একটি স্ট্যান্ডবাই সং। খুব শিগগির নচিকেতা’র কথায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘তুমি কোন পার্টির লোক’ শিরোনামের সেই গানটি।
মানিকের ফেসবুকে নীলাদ্রী নীল নামের এক তরুণ কবি লিখেছেন, ‘স্ট্যান্ডবাই সং নি:সন্দেহে বাংলা গানের নতুন সংযোজন। প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ নিয়ে অহরহ গান হলেও চলতি ঘটনা নিয়ে গান তৈরির এই ধারা অবশ্যই বাংলা গানের গতানুগতিক অচলায়তন ভাঙতে ভূমিকা রাখবে।’
কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি আমিরুল মোমেনীন মানিক একাধারে গীতিকার ও সুরকার। ইউনেস্কো ক্লাব জার্নালিজম এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক, লেখক হিসেবেও পেয়েছেন পরিচিতি। ২০১২ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর লেখা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় স্টুপিড শিক্ষক’ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিক্রিত বই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরায় বাংলাভাষীদের মধ্যে স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছেন।
২০০৫ সালে ‘মা যে দশ মাস দশ দিন’ শিরোনামের একটি গান গেয়ে তিনি গণমাধ্যমে বিপুল পরিচিতি পান। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘সাড়া’, ‘আলোর পরশ’, ‘প্রহরী’, ‘আপিল বিভাগ’, ‘মা’ নামের অ্যালবাম।
২০১৪ সালে বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে আমিরুল মোমেনীন মানিকের ‘আয় ভোর’ শিরোনামের দ্বৈত গান প্রকাশ পেলে ব্যাপক সাড়া পান। পরবর্তিতে একই নামে লেজারভিশন থেকে প্রকাশিত হয় ১১টি গানের সমন্বয়ে অ্যালবাম। নচিকেতা’র সঙ্গে তুমুল আলোচিত গানটির কথাগুলো এরকম ‘আয় ভোর আয় ভোর/ তোর জন্য এই স্বপ্ন দেখা/ দিন যায় রাত যায় তোরই অপেক্ষায়/ তোকে পেলেই পাবো মুক্তির রেখা।’
ইউটিউবে তাঁর চ্যানেল ‘মানিক মিউজিক’ এ তিনি একের পর এক প্রকাশ করছেন নতুন নতুন গান।
আমিরুল মোমেনীন মানিক শুধু নিজে গায়ক হিসেবে নন, বরং জীবনমুখী গানের গীতিকারও সুরকার হিসেবেও নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন। নচিকেতা ছাড়াও ইতোমধ্যে তাঁর কথায় গেয়েছেন রথীন্দ্রনাথ রায়, নকুল কুমার বিশ্বাস, কুমার বিশ্বজিৎ, আগুন, আসিফ আকবর, এসআই টুটুল, প্রমিথিউসের বিপ্লব, ফজলুর রহমান বাবু, রাজিব, রিংকু, পুলক, লিজাসহ অনেকে।
মানিক ইতোমধ্যে গানের জন্য সফর করেছেন ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত ও সৌদি আরব। পেয়েছেন লন্ডন সাংস্কৃতির উৎসব এ্যাওয়ার্ড, শিল্পকলা একাডেমি শিল্পী সম্মাননা, পশ্চিমবঙ্গ শিল্পী সম্মাননা (ভারত-কলকাতা), আরশীকথা সম্মাননা (ত্রিপুরা-ভারত)সহ অনেক পুরস্কার।
২০১৬ সালে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসি রহমান মানিকের লেখা ও সুর করা ‘যখন আমি হাঁটতে শিখিনি’ শিরোনামের গান বিটিভি’র ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানে চার পর্বে প্রশিক্ষণ দেন। সবমিলিয়ে গান ও সুরের এক অন্যরকম জগৎ তৈরি করতে চান এই শিল্পী। গানের মধ্য দিয়ে মানবতার কথা তুলে ধরাই শিল্পী আমিরুল মোমেনীন মানিকের নিরন্তর ধ্যান ও লক্ষ্য।