
ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
হাওরাঞ্চলে আতঙ্কের আরেক নাম বজ্রপাত। হাওর অধ্যুষিত ধর্মপাশা ও নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাসে ঝড়-বৃষ্টির সাথে আকাশ থেকে পড়া বজ্রপাতে প্রাণ হারায় হাওরের কৃষক, জেলে ও গৃহপালিত পশু।
বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণার পর বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তবে গত বছর ধর্মপাশা ও মধ্যনগরের ১০ উপজেলার মধ্যে মাত্র তিন ইউনিয়নে তিনটি বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> চাঁদাবাজির লাইসেন্স দিয়েছে ঘাটাইল পৌরসভা
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বালিজুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আঃ রশিদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় ও দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে যা হাওর অধ্যুষিত এ দুই উপজেলার জন্য একেবারেই অপ্রতুল। হাওরের কৃষক ও জেলেদের স্বার্থে বেশি করে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, বছরের এই সময় থেকে হাওর এলাকায় শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত। চলে মে-জুন মাস পর্যন্ত। এই কয়েকমাস সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায়, বজ্রপাতে স্বজন হারানোদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ। হাওরে কাজ করার সময় বজ্রপাত শুরু হলে দিশেহারা হয়ে পড়েন কৃষক-জেলে।
বালিজুরি গ্রামের শাহজাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় বজ্র নিরোধ করতে একটি টাওয়ার দেওয়া হয়েছে। এতে কিছু মানুষ নিরাপদ থাকলেও পুরো হাওর অরক্ষিত। আমি মনে করি হাওরে বজ্র নিরোধের টাওয়ার বসালে জেলেরা নিরাপদে মাছ ধরতে পারত। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ বিষয়টি নজরে আনার জন্য।
বৃদ্ধ আঃ রহিম বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম টাডা (বজ্রপাত) পইরা ওহনের মত অত মানুষ মরতে দেখছি না। ওহন টাডা পড়লেই হুনি(শুনি) মানুষ মরছে।
আরও পড়ুন>> গাজীপুরে আগুনে পুড়ল ১১ ঝুটগুদাম
কলেজ শিক্ষার্থী রবিন বলেন, আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে দেখলেই ভিতরে ভয় জাগে। আমরা হয়তো বিদ্যুত চমকাতে দেখলেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। কিন্তু যারা হাওরে মাছ ধরতে যায় তাদের নিয়ে খুব চিন্তা। ওদের কথা ভেবে সরকারের উচিত হাওরে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা।
বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন প্রকল্পের প্রকৌশলী সালাউদ্দিন বললেন, হাওরের দিন দিন বেড়েই চলেছে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা। তাই সুনামগঞ্জে গত বছর জেলার ৬ টি উপজেলায় আমরা ২৪টি লাইটেনিং এরেস্টার স্থাপন করেছি। ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিটি দণ্ড এর ৩শ ফুট এরিয়ার মধ্যে কোনো বজ্রপাত হলে তা টেনে মাটিতে পাঠিয়ে দেবে। একই সঙ্গে ওই স্থানে মোট কতটি বজ্রপাত হয়েছে তা গণনা করে রাখবে। মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগলের প্রাণও বাঁচবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শীতেশ চন্দ্র সরকার বলেন, হাওর এলাকা হওয়ায় এখানে বজ্রপাতে প্রাণহানি বেশি হয়। বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন একটি ব্যায়বহুল ব্যাপার। তাছাড়া এই দণ্ড মাত্র ৩০০ ফুট জায়গার নিরাপত্তা দিচ্ছে। এটির পরিধি কিভাবে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমরা বেশি বেশি তালগাছ রোপন করতে পারি। এছাড়া এ ব্যাপারে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে।