বরগুনার বেতাগীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিনদিন অবনতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে ১ জনের প্রাণ। উপজেলার জোয়ার করুনা গ্রামের উত্তম মল্লিকের গৃহীনী স্ত্রী শিল্পী রানী (৩৮) গত এক সপ্তাহ আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বরিশাল শেরই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠনো হয়। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে গত রোববার তিনি মারা যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাসেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে জুলাই মাস থেকে এর প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পায়। বেতাগী হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ জানায়, আজ সোমবার (২১ আগষ্ট) দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপজেলা হাসপাতালে ১২১ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েক সপ্তাহের বৃষ্টির পর পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে সড়কের পাশে জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করছে এডিস মশার লার্ভা। হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বাসায় থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। আক্রান্তের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হলেও এবারে প্রকৃত ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসাবের পাচঁ গুন হবে কারন অনেকেই পরীক্ষা করাতে বা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যান না। হাসপাতালের নিয়মিত রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভোলানাথপুর গ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত মো. সাগর (২৫) জানান, প্রথমে আমার জ্বর হয়। আমার চোখ লাল হয়ে যায়। জ্বর না কমায় হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করাই। এরপর ডেঙ্গু ধরা পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি দেন চিকিৎসক। বর্তমানে আমি চিকিৎসাধীন আছি।
বেতাগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন আলেয়া বেগম বলেন, দুদিন জ্বরের পর আমার স্বামীকে ডাক্তার দেখিয়ে নমুনা পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেই থেকেই হাসপাতালে রয়েছি। এখন অবস্থা একটু ভালো।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেতাগী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাকিরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ‘জ্বর শুরু হয়ে প্রচণ্ডভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। অবস্থার এতাটা অবনতি হয়েছিল ধারনা করে ছিলাম আর কাজ হবেনা। বলতে পারেন, মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি।’
বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ফাহমিদা বলেন, হাসপাতালে পুরুষ ও নারী ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মশারির টাঙ্গিয়ে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালে জায়গা সংকটের মাঝেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে আলাদা করে ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হেল্প ডেস্ক খোলা, হাসপাতাল ক্যাম্পাস ও আশে-পাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করছি।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা যথেষ্ঠ নয়। এ জন্য নেই কোনো বিশেষ উদ্যোগ। সম্প্রতি পৌর শহরে বেতাগী পৌরসভা মশা নিধনে স্প্রেসহ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার-প্রচারণা চালালেও ব্যাপক কোনো তৎপরতা তাঁদের চেখে পড়ছেনা।
তবে এ বিষয়ে বেতাগী পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব এবিএম গোলাম কবির জানান, শহরের সব এলাকায় রুটিন মাফিক মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্প্রেসহ একাধিক টিম এলাকা ঘুরে মশার উৎপত্তি স্থলগুলো চিহ্নিত করন, জলাবদ্ধতার অপসারণ এবং বিশেষ বিশেষ জাগায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। সেজন্য পৌরসভার পরিচ্ছন্ন শাখা এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃস্টিতে আমরা কাজ করছি। কোনো অবস্থাতেই যেন ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সে জন্য ইতোমধ্যে শোভাযাত্রা, লিফলেট বিতরণ, স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কর্মশালা ও স্বাস্থ্য বিভাগের চাহিদা সাপেক্ষে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছি।