দীর্ঘ ৯ মাসেরও অধিক সময় ধরে বেতন ভাতা বন্ধ রেখে সেই বিতর্কিত প্রিয়া সাহার এনজিও শারি রাতের আঁধারে অফিস গুটিয়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে তাও কেউ বলতে পারছে না। অফিসের অনেক কর্তাব্যক্তিরা মোবাইলও রিসিভ করছেন না। তবে প্রতিষ্ঠানটির ফিনান্স সমন্বয়কারী প্রদীপ দাস বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন অফিস গুটিয়ে নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে উক্ত শারি এনজিও ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ এবং খুলনা অফিসের আওতায় প্রায় ৮০জন কর্মকর্তা, কর্মচারিদের কোন প্রকার বেতনাদি দিচ্ছেনা। উপরন্তু আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ওই সকল কর্মীদের পূর্বের পাওনা তথাকথিত স্টাফ ওয়েলফেয়ারের নামে কর্তনকৃত বেতনের ৫% হারে যে টাকা জমা হয়েছে, তাও দিচ্ছে না। টাকা চাইলেই অফিসের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক ডেসটিনি কর্মকর্তা শক্তিময়ী হীরা বলেন, আমেরিকায় প্রিয়া সাহার সাথে কথা বলতে। অনেকে আবার প্রিয়া সাহার সাথে কথা বললে তিনি ধমকের সুরে তাদেরকে থামিয়ে দেন বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, অফিসে কর্মরত কর্মীদের বেতন ভাতা না দেওয়ার উদ্দেশ্যেই হঠাৎ করে অফিস গুটিয়ে চলে গেছে এই সংস্থাটি। কোথায় গেছে তাও কেউ বলতে পারছে না। যদিও অফিসের সাথে সম্পর্কিত কেউ ফোনই ধরছে না। শারি সংস্থার সেই বিতর্কিত নির্বাহী পরিচালক প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় সাহা অফিসের জেনারেল ফান্ডে থাকা সকল টাকা নিয়ে গেছেন বলে সংস্থার হিসাব শাখা থেকে জানা গেছে। যে কারণে কর্মীদের প্রাপ্য বেতন ভাতাদিও দিতে পারছে না এই সংস্থাটি। উল্লেখ্য যে, ‘জার্মান ভিত্তিক দাতা সংস্থা ব্রেড ফর দ্যা ওয়ার্ল্ড এবং মিজেরিয়র’ বাংলাদেশের তথাকথিত বেসরকারী সংস্থা শারিকে প্রতি বছর অন্ততঃ আড়াই কোটি টাকা অনুদান দিত।
সর্বশেষ ২০২০ সালের শেষের দিকে করোনা চলাকালীন সময় ত্রাণের জন্য উক্ত দুটি দাতা সংস্থা থেকে ৪৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত অনুদান দিলেও কোন ত্রাণ না দিয়ে পুরোটাই আত্মসাত করে আমেরিকায় প্রিয়া সাহার কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দাতা সংস্থা ব্রেড ফর দ্যা ওয়ার্ল্ড তাদের নিজস্ব অডিট টিম পাঠিয়ে অডিট করালে ত্রাণের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু আত্মসাতের বিষয় ধরা পড়ে। ফলে ওই দাতা সংস্থা শারিকে অনুদান বন্ধ করে দেয়।
জানা গেছে, দেশের দলিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করার, তাদের জীবনমান উন্নয়নে কথা বলে আনা টাকার নামমাত্র কিছু টাকা খরচ করে কিছু ট্রেনিং প্রোগ্রামসহ কিছু সচেতনতামূলক সভা, সেমিনার করে অনুদানের বাকী টাকা আত্মসাৎ করতো শারি।
এ সকল বিষয় জানার জন্য শারি’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক শক্তিময়ী হীরা এর মোবাইল নম্বর ০১৬৭৬২৮৬০১৫ এ ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেন নি। অন্যদিকে সংস্থার ফিনান্স সমন্বয়কারী প্রদীপ দাস এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অফিস গুটিয়ে নেওয়ার কথা সঠিক নয়। তবে ফান্ড না থাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। ফান্ড না পাওয়ায় ষ্টাফদের বেতনভাতাও একটু বকেয়া পড়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কাছে বাংলাদেশের হিন্দুদের নির্যাতন করা হয় এবং হিন্দুরা দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করায় দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে বিতর্কিত হন পিরোজপুরের নাজিরপুরের মেয়ে এবং শারি’র নির্বাহী পরিচালক প্রিয়া সাহা।
২০১৯ সালের ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউজে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আয়োজনে ‘সেকেন্ড মিনিস্টারিয়াল টু এ্যাডভান্স রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ নামের একটি ইভেন্টে যোগ দিতে গিয়ে প্রিয়া সাহা তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কাচে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে থেকে (তার ভাষায়) ‘৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান নিখোঁজ হয়েছে’, তার নিজের বাড়িঘরও আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু এর কোন বিচার হয় নি। মি ট্রাম্পকে অনুরোধ করেন তিনি যেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সাহায্য করেন- যাতে তারা দেশে থাকতে পারে।
প্রিয়া সাহা সেদিন ট্রাম্পকে বলেন, ‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে ৩৭ মিলিয়ন (তিন কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের, বাংলাদেশী মানুষদের, সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। সে দেশে এখনো ১৮ মিলিয়ন (১ কোটি ৮০ লাখ) সংখ্যালঘু আছেন। আমার অনুরোধ হচ্ছে, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে চাই না। শুধু আমাদের দেশে থাকতে সাহায্য করুন।’
প্রিয়া সাহা আরো বলেন, ‘আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের জমি নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এর কোন জাজমেন্ট (বিচার) হয় নি।’
এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে প্রশ্ন করেন ‘বাড়ি ও জমি কে নিয়েছে ?’
তখন প্রিয়া সাহা একটু কথা গুলিয়ে ফেললেও পর মুহূর্তেই বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা সবসময়ই রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে। সব সময়।’
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রিয়া সাহার এমন অভিযোগের বিষয়ে সে সময়ে বাংলাদেশ সরকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং উক্ত অভিযোগ ভয়ংকর মিথ্যা, সাজানো গল্প বলে অভিহিত করে।
এ ঘটনার পরে তিনি আর বাংলাদেশে ফিরে আসেন নি। তিনি বর্তমানে মুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করছেন। সেখানে তার দুই মেয়েও রয়েছে।