নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে ব্যবসায় যে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভারতের গাড়ি নির্মাণ শিল্প। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার চাপ যুক্ত হয়েছে এ খাতে। পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণসংক্রান্ত নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে সেখানেও বাড়তি খরচ যুক্ত হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে মাত্রই পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটতে শুরু করেছিল ভারতের এ শিল্প খাতটি। এরই মধ্যে নতুন নতুন বাধা এসে পুনরুদ্ধারকে বাধাগ্রস্ত করছে, এর গতি শ্লথ করছে।
ভারতের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইমাস পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনুরাগ সিং বলেন, এ মুহূর্তে গাড়ি নির্মাণ শিল্প কয়েক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ভারতের গাড়ির বাজারের আকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণের। ফলে খাতটি আন্তর্জাতিক পরিসরের ব্যবসায়ীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের এ খাতের আরো বড় হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কারণ অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় ভারতে গাড়ি আমদানির পরিমাণ কম। ভারতের অটোমোবাইল খাতে কার, মোটরসাইকেল এবং বাণিজ্যিক যানবাহন তৈরি হয়। এর আকার প্রায় ২২ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা দেশটির মোট জিডিপির ৭ দশমিক ১ শতাংশ। ইনভেস্ট ইন্ডিয়ার পূর্বাভাস বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজারে পরিণত হবে।
যেহেতু খাতটি ভারতের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই নীতিনির্ধারক ও সব অংশীদারকে এর সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি সব প্রতিকূলতার পরও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্যও ভারত এখনো আকর্ষণীয় বাজার। গত সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া সুদের হার বাড়িয়েছে। উচ্চমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এ নিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো বাড়ানো হলো সুদের হার। সর্বশেষ ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে মূল রেপো রেট ৬ দশমিক ২৫ শতাংশে নেয়া হয়েছে। ফলে ঋণ নেয়া আগের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাড়ি কেনার জন্য নেয়া ঋণও। সুদের হার বৃদ্ধির এ পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধির যে শঙ্কা তা গ্রাহকদের আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছে ফেডারেশন অব অটোমোবাইল ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (এফএডিএ)। অবশ্য ভারতের গাড়ি নির্মাণ খাতে চ্যালেঞ্জ যে শুধু মহামারী-পরবর্তী সময়েই সৃষ্টি হয়েছে তা নয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা ফোর্ড ভারত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। কারণ হিসেবে যথাযথ মুনাফা না হওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
অর্থাৎ বেশ লম্বা সময় ধরেই নানা ধরনের প্রতিকূলতা ও বাধা অতিক্রম করছে ভারতের এ খাত। কোভিড-১৯ মহামারী সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ধীরগতির পেছনে। সামনে কার্বন নিঃসরণসংক্রান্ত বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে আরো নানামুখী সমস্যার মুখে পড়তে হবে। এরই মধ্যে ভারত সরকার গাড়ি নির্মাতাদের জন্য কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। বিশেষ করে বায়ুদূষণ যে শহরগুলোয় সবচেয়ে বেশি সেগুলোয় কার্বন নিঃসরণ কমাতে কঠোর হচ্ছে সরকার। ফলে এটিও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন চাপের কারণ। সব মিলিয়ে সংকট মোকাবেলায় গাড়ির দাম বাড়াতে হতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এরই মধ্যে কিছু কিছু কোম্পানি এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও নিয়েছে।