‘দেশটাকে তো জাহান্নাম
বানিয়ে ফেলেছেন’– একটি মামলায়
জামিন শুনানিতে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ এমন মন্তব্য করায় তাঁকে সতর্ক করেছেন
প্রধান বিচারপতি। মঙ্গলবার বিকেলে হাইকোর্ট বিভাগের ওই বিচারপতিকে খাস কামরায় ডেকে
সতর্ক করার পাশাপাশি এ ধরনের মন্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা চান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল
হাসান। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সময় আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি
সেখানে ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আগামী রোববার
বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ অবসরে যাবেন। ২০০৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট
সরকারের সময় তাঁকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অবসরের পাঁচ দিন
আগে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোচনায় এলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি ওই সময় ইমদাদুল হক আজাদকে
অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আদালতে বিচারকাজের সময় মন্তব্য করার ব্যাপারে আরও যত্নশীল
হতে বলেন।
ওই বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন: অ্যাটর্নি
জেনারেল
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের
এমন মন্তব্যকে অসাংবিধানিক ও অসৌজন্যমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ
এম আমিন উদ্দিন।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের
প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, তিনি (বিচারপতি) যেটা
বলেছেন, সেটা তাঁর শপথের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অর্থাৎ তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাই তাঁর ওই
বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদগুলো প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হয়েছে। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।
বিচারকের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রেখে অ্যাটর্নি
জেনারেল বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে অনেক চক্রান্ত রয়েছে। উনি (হাইকোর্টের বিচারক) কাকে
লাভবান করতে এমন মন্তব্য করেছেন।
আদিলুর-এলানের জামিন
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আইনজীবী আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস
এম নাসির উদ্দিন এলানকে মঙ্গলবার জামিন দেন হাইকোর্ট। এক আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে
বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেদন
মঞ্জুর করেন।
সকালে আদিলুর-এলানের জামিন শুনানির শুরুতে
আদালতে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমাদেরও বক্তব্য আছে।’ তখন হাইকোর্ট
বলেন, ‘আসামিদের আইনজীবীকে
আগে বলতে দিন। আপনি এখনই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন? দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’
এ জে মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারার মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার
টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।’ এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল
করিম বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে গুজব ও তথ্য বিকৃতির অভিযোগে সাজা হয়েছে।’
তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাহলে তাদের দুই
বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না।’ শুনানি শেষে
আদিলুর ও এলানের আপিল আবেদন গ্রহণ করে তাদের জামিন আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের
১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন আদালত।
পরে আইনজীবী রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন,
আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে। ফলে আপাতত তাদের কারামুক্তিতে আইনি
বাধা নেই। তবে রায়দানকারী আদালতে জামিননামা (বেইলবন্ড) জমা দিতে হবে। আমরা দ্রুতই সেটি
জমা দেওয়ার চেষ্টা করব। এর আগে উচ্চ আদালতের জামিনের আদেশের কপি সংগ্রহ করব।
১০ বছর আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগের মামলায় গত
১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি তাদের
১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। রায়ের পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের পাঠানো হয় কারাগারে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ৫০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এর পর ২৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে
আপিল করে সাজা থেকে খালাস ও জামিন চান সাজাপ্রাপ্তরা। অন্যদিকে গত ৫ অক্টোবর তাদের
সাজা বাড়াতে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় ৬১
জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করে অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য, ওই রাতের অভিযানে কেউ মারা
যায়নি। সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ওই বছরের ১০ জুন সাধারণ ডায়েরি (জিডি)
করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে সেটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হিসেবে
নথিভুক্ত করা হয়। এ মামলায় আদিলুর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।