অবশেষে কেরানীহাট–বান্দরবান জাতীয় মহাসড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
সাম্প্রতিক বন্যায় ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পর্যটন জেলা বান্দরবানে যাতায়াতের দৃষ্টিনন্দন
এ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় গত একমাস ধরে ঝুঁকি নিয়ে ওই পথে যান চলাচল
করছে। এ নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর আজকের দর্পণে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে
সংস্কার কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় কেরানীহাট–বান্দরবান
মহাসড়কের সাতকানিয়ার সত্যপীরের মাজার গেট এলাকায় সড়কের বিশাল অংশ ধসে পড়ে মৃত্যুফাঁদে
পরিণত হওয়া অংশে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী
জানান, বৃষ্টিতে সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত সড়কগুলোর
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়কটির উন্নয়ন কাজ করছে সেনাবাহিনী।
তারা সড়কটি আগামী জুনে বুঝিয়ে দেবে। আমরা সড়কটির সংস্কার বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলেছি।
তারা ইতোমধ্যে সংস্কার কাজ শুরু করেছে। কম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি মেরামত করে
দেবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বান্দরবানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক। পর্যটন শহর হওয়ায়
প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটকসহ স্থানীয়রা যাতায়াতের জন্য সড়কটি ব্যবহার
করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলার একমাত্র সড়কটি আঁকা বাঁকা ঢালু ও সরু হওয়ায় প্রায়ই
ঘটতো নানা ধরনের দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয়, সড়কের বিভিন্ন স্থানে নিচু হওয়ার কারণে বর্ষা
মৌসুমে কয়েকদিন বৃষ্টি হলে রাস্তার বিভিন্ন অংশ তলিয়ে যেত। আর এর ফলে সারাদেশের সঙ্গে
বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তেন পর্যটকসহ
স্থানীয়রা।
এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সড়কটির যথাযথ মান, প্রশস্তকরণ ও উন্নতীকরণ করে জাতীয়
মহাসড়কে রুপান্তর করতে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন
ব্রিগেডের অধীনে ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটার
কেরানীহাট- বান্দরবান সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করায় এখন লাঘব হবে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি।
সেই সঙ্গে উন্নত হবে স্থানীয়দের জীবনমান ও হ্রাস পাবে সড়ক দুর্ঘটনা এমনটাই প্রত্যাশা
করছেন স্থানীয়রা।
তবে গত আগস্ট মাসের শুরুতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে সাতকানিয়াবাসী। ব্যাপক
ক্ষতি হয় জান-মালের। এখনো সেই ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে তারা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাই
ছিল যে অনেকে তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কেরানীহাট–বান্দরবান
মহাসড়ক। নির্মাণের আট মাস না পেরুতেই এ মহাসড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত
হয়। সাতকনিয়ার সত্যপীরের মাজার গেট এলাকায় সড়কের বিশাল অংশ ধসে পড়ে।
সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে কেরানীহাট–বান্দরবান
জাতীয় মহাসড়কটি যথাযথ মান, প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত
হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২০১৯
সালে মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই ২০২২ সালের ডিসেম্বরে
সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্তকরণ, বন্যার পানিতে তলিয়ে
যাওয়া সড়কের স্থানগুলো উঁচুকরণ, ২১টি ব্রিজ, ১৫টি কালভার্ট, ২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিষ্কাশন
অবকাঠামোসহ নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২৬৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।