প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি)
বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয়
সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আজ মঙ্গলবার
‘বর্ডার
গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২’ উপলক্ষে এ বাহিনীর সব সদস্যকে
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
শেখ হাসিনা
বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে
সাড়া দিয়ে তৎকালীন ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম
প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ইপিআরের বেতার কর্মীরা পিলখানা
থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে
দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসযোগে প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার
মেজর শওকত আলীসহ তিনজনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে
এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের
জন্য এ বাহিনীর দুজন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ সদস্য খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান
অর্জন করেন। আমি তাদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
তিনি বলেন,
স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিলখানায় এসে দেখেন, পাকিস্তানি
বাহিনী সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। জাতির পিতা নিজ হাতে এ বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের
কাজ শুরু করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ বাহিনীকে যুগোপযোগী
ও অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। এ লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ প্রণয়নসহ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’-এর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বাহিনীর পুনর্গঠন ও কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের জন্য নতুন নতুন রিজিয়ন,
সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও বিওপি স্থাপন করে প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে
এই বাহিনীর জনবল ৯২ হাজারে উন্নীত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাহিনীর মনোবল ও সাহস বৃদ্ধিতে পেশাগত উৎকর্ষের কোনো বিকল্প
নেই। উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড
কলেজ’ সাতকানিয়া,
চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠাসহ চুয়াডাঙ্গায় অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধাসংবলিত আরও একটি প্রশিক্ষণ
কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান।
তিনি বলেন,
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এয়ার উইং সৃজন করে ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক এমআই-১৭১-ই প্রযুক্তির
হেলিকপ্টার সংযোজন করা হয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে বাহিনীতে
যোগ করা হয়েছে অত্যাধুনিক ট্যাঙ্কবিধ্বংসী অস্ত্র। দুর্গম সীমান্তে টহল কার্যক্রমে
গতিশীলতা আনতে যুক্ত হয়েছে অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল (এটিভি)। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তে
ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) এবং রায়ট কন্ট্রোল
ভেহিক্যাল সংযোজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন,
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবনের গহিন অরণ্যের জল-সীমান্তে এবং মিয়ানমার সীমান্তের
নাফ নদ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাগর উপকূলে মাদক ও মানব পাচারসহ যে কোনো আন্তঃসীমান্ত
অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের বহরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন
বিভিন্ন সিরিজের হাইস্পিড ইন্টারসেপ্টার জলযান ও এয়ার বোট সংযোজন করা হয়েছে। আধুনিক
ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সীমান্তের
ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকায় ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স
সিস্টেম’ স্থাপন করা হয়েছে। তা ছাড়া পার্বত্য সীমান্ত ও দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী
জনসাধারণের জন্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন
শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, জাতির পিতার আহ্বানে উজ্জীবিত হয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ
করে যাচ্ছেন। আমাদের সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে এবং মাদকমুক্ত
দেশ ও সমাজ গঠনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া দেশের
সীমান্তের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে
সহায়তা প্রদান, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন ও দেশের যে কোনো দুর্যোগকালীন উদ্ধার কর্মকাণ্ডসহ
বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিককালে
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পেশাদারিত্বের নিদর্শন রেখে
চলেছে, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, আমি আশা করি, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি দেশ ও দেশের
মানুষের কল্যাণে এ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সততা,
নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করবেন। তিনি ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২’-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।