২০২০ সালটা তাদের জন্য খানিকটা উদ্বেগের, যারা বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) স্টার্টআপগুলোয় অর্থলগ্নির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা করেছিলেন। টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলোন মাস্কের আর্থিক সাফল্যের অনুকরণে তারা এমন আশা করেছিলেন। তবে আর্থিক বাজারের আবর্তন ও সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় অনেক ইভি স্টার্টআপের বাজারদর কমে গিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকির মধ্যে ইভির চাহিদা কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী বছর পরিবেশবান্ধব এসব গাড়ির বিক্রি কম থাকলেও উৎপাদন বাড়ার আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
রয়টার্সের খবর অনুসারে, ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে প্রবেশের পর পরই রিভিয়ান অটোমোটিভের বাজারমূল্য ছিল ফোর্ড মোটরের তুলনায় বেশি। চলতি বছর ইভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি ৭০ শতাংশেরও বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে। খারাপ অবস্থা অন্য ইভি স্টার্টআপগুলোরও। বৈদ্যুতিক ভ্যান প্রস্তুতকারক অ্যারাইভল আশঙ্কা করছে যে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে হয়তো সব নগদ অর্থ ফুরিয়ে যেতে পারে। সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল দ্বারা সমর্থিত লুসিড গ্রুপ রীতিমতো সংগ্রাম করছে তাদের এয়ার লাক্সারি ইভি তৈরি করতে। চীনে টেসলা প্রতিদ্বন্দ্বী এক্সপেংয়ের শেয়ারদরও কমেছে ৮০ শতাংশের বেশি।
এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত ইঞ্জিন থেকে বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনে রূপান্তরের জন্য অটোমোবাইল শিল্প ১ লাখ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। আমেরিকার ডেট্রয়েট শহর থেকে শুরু করে চীনের সাংহাই পর্যন্ত গাড়ি নির্মাতারা ও সরকারি নীতিনির্ধারকরা স্বচ্ছ এবং নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইভির দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত সব যাত্রীবাহী পরিবহন বিক্রয়ের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে বা বেঁধে দিয়েছে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো। গত বছর বাজারমূল্য ১ লাখ কোটি ডলার পরিমাণ উন্নীত করার মাধ্যমে টেসলা ইনকরপোরেটেড বিশ্বের শীর্ষ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তাদের এ উত্থান স্বাভাবিকভাবেই টয়োটা মোটর ও ফক্সওয়াগনের মতো প্রতিষ্ঠিত গাড়ি নির্মাতাদের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
নতুন বছরে বিশ্বের প্রধান বাজারগুলোয় পিকআপ ট্রাক থেকে শুরু করে মাঝারি মূল্যের এসইউভি ও সেডানকে বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনে রূপান্তরের জোয়ার শুরু হবে বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি দ্রুত বিশ্বব্যাপী যানবাহন বাজারের অর্ধেক দখল করবে—এ বিষয়ে শিল্প নির্বাহী ও বাজার বিশ্লেষকরা অবশ্য একমত নন। বিশ্বের বৃহত্তম একক গাড়ির বাজার চীন। ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহন বাজারের প্রায় ২১ শতাংশই তাদের দখলে। ইউরোপে মোট যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রয়ের প্রায় ১২ শতাংশই বৈদ্যুতিক যান। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ইভির বাজার অংশীদারত্ব মাত্র ৬ শতাংশ।
শিল্পটির নির্বাহী ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, বৈদ্যুতিক যান ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে যানটির ব্যবহারকারীদের জন্য ফাস্ট চার্জিং পরিকাঠামোর অভাব। সঙ্গে রয়েছে ইভি ব্যাটারির ক্রমবর্ধমান খরচ, মূল উপকরণের ঘাটতি এবং সরকারি ভর্তুকি নিয়ে অনিশ্চয়তা। যদিও যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপসহ প্রধান বাজারগুলোয় সরকারি ভর্তুকি বৈদ্যুতিক যানবাহন ঘিরে চলমান আশাকে উজ্জীবিত রেখেছে। অটোফোরকাস্ট সলিউশনসের পরামর্শদাতাদের মতে, ২০২৯ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক যানবাহন উত্তর আমেরিকার বাজারের এক-তৃতীয়াংশ দখল করতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত গাড়ির প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০২২ সালে মার্সিডিজ, ফোর্ড ও জেনারেল মোটরসের মতো প্রতিষ্ঠিত গাড়ি নির্মাতারা নতুনদের চ্যালেঞ্জ করার জন্য কয়েক ডজন নতুন বৈদ্যুতিক যান নিয়ে এসেছে। ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এ গাড়িগুলোর বেশির ভাগেরই ব্যাপক উৎপাদন শুরু হবে।