পাসপোর্ট, ভিসা ও বোর্ডিং পাস ছাড়া কুয়েত এয়ারওয়েজের ফ্লাইটের একটি বিমানে ওঠা শিশু জুনায়েদ এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। সংবাদকর্মীদের কাছে তুলে ধরেছে ১২ বছরের শিশু জুনায়েদ তার বিমানে ওঠার পুরো মিশনের কথা।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা বলে প্রথমে বাড়ি থেকে মাত্র ১ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে একাই রওয়ানা দেয় জুনায়েদ। ঢাকার সায়েদাবাদে পৌঁছে সেখান থেকে বিমানবন্দরের বাসে ওঠে। বিমানবন্দরে পৌঁছে সে বিমানে ওঠার পথ খুঁজতে থাকে। দ্বিতীয় তলায় উঠতে না পেরে সব দিক ভালো করে দেখেশুনে ছাদ বেয়ে দ্বিতীয় তলায় ওঠে জুনায়েদ।
পরে প্রবেশ পথে তাকে জিজ্ঞেস করলে জুনায়েদ উত্তর দেয়, তার সাথে কেউ একজন এসেছে। মূলত একা পরিচয় না দিয়ে প্রতিটি নিরাপত্তা বেষ্টনী সে কোনও একজনের সাথে আসার কথা বলে। এতে করে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে গেট পাস দেয়। প্রতিটি নিরাপত্তা ধাপ পেরোতে জন সমাগমকে কাজে লাগায় শিশু জুনায়েদ। অনেক মানুষের ভিড়ে নিজেকে আড়াল করেই ছুটতে থাকে সে। এক পর্যায়ে সবশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে বিমানে উঠতে সক্ষম হয় জুনায়েদ। বিমানে উঠে প্রায় ১ ঘণ্টা বসেছিল সে। এ বিষয়ে জুনায়েদ বলে, ‘বিমানে ওঠার পর অনেকক্ষণ পরে একজন এসে বলে তুমি আমার সিটে বসছো কেন? তোমার সাথে কি কেউ আছে? আমি কোনও উত্তর দিতে পারি নাই। এরপরই পুলিশ আসে। আমারে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে, তখনই একটু ভয় লাগছে, না হয় এর আগে একটুও ভয় পাই নাই।’
জুনায়েদ আরও বলে, ‘বিমানটা আকাশে উড়লে অনেক বেশি ভাল লাগতো। উড়ার আগেই আমাকে নামতে হয়েছে, এজন্য খারাপও লাগছে।’
বিমানে ওঠার ইচ্ছে হলো কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে জুনায়েদ বলে, ‘মন চাইছে হঠাৎ করে, শখ থেকেই বিমানে ওঠার কথা মাথায় আসলো। আগে কখনো উঠি নাই; এজন্য আরও বেশি মন চাইছে।’
উল্লেখ্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব স্তরের নিরাপত্তা ডিঙিয়ে পাসপোর্ট, টিকিট, বোর্ডিং পাস ছাড়া এক শিশু নির্বিঘ্নে কুয়েত এয়ারওয়েজের এক ফ্লাইটে উঠে যায়। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ৪টা ১০ মিনিটে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় হতভম্ব ওই ফ্লাইটের পাইলট, ক্রুসহ সব যাত্রী। পুরো ফ্লাইটটির ৩৩০ আসনে যাত্রী পূর্ণ থাকায় কেবিন ক্রুরা ওই শিশুটিকে কোনো সিট দিতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে আসন ছাড়া কীভাবে শিশুটি ফ্লাইটে উঠল এ নিয়ে শুরু হয় দৌড়ঝাপ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তাকর্মীরা ছুটে আসেন ফ্লাইটে। এ ঘটনায় কুয়েত এয়ারওয়েজের কেইউ-২৮৪ ফ্লাইটটি প্রায় আধা ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ত্যাগ করে। বিমানটিতে ৩৩০ জন যাত্রী ছিলেন।
এ ঘটনায় আনসার, বিমান, এপিবিএনসহ সব সংস্থার ১০ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।