বাংলাদেশ প্রিমিয়ার
লিগ (বিপিএল) মানেই যেন বিদেশি কোচের মেলা। প্রধান কোচ তো বটেই, কোচিং স্টাফের বেশির
ভাগ পদে সাধারণত বিদেশিদের ওপরই ভরসা রাখে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। যদিও স্থানীয় কোচদের সাফল্যের
হারই বেশি। তবু আরও অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের মতো বিপিএলেও বিদেশি কোচদের বেশ
কদর থাকে।
এবার এখানেই ভিন্ন
চিত্র দেখা যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এই বিপিএলে সাত দলের পাঁচ প্রধান
কোচই দেশি। গত বিপিএলে দেশি-বিদেশি কোচের অনুপাত ছিল সমান ৩: ৩। করোনা বিরতির আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি
পদ্ধতি থেকে সরে আসা বিপিএলের সাত দলের ছয় প্রধান কোচই ছিলেন বিদেশি। ২০১৯ সালের সেই
বিপিএলে একমাত্র স্থানীয় কোচ হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ঢাকা প্লাটুনের দায়িত্বে
ছিলেন তিনি।
এবার চট্টগ্রাম
চ্যালেঞ্জার্স ও ঢাকা ডমিনেটরস শুধু বিদেশি কোচের দিকে ঝুঁকেছে। চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজিটির
প্রধান কোচের ভূমিকায় দেখা যাবে সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার জুলিয়ান উডকে। গত বিপিএলে সিলেট
সানরাইজার্সের ব্যাটিং কোচ ছিলেন উড। ঢাকার কোচ হয়ে এসেছেন সাবেক শ্রীলঙ্কান বাঁহাতি
পেসার চামিন্দা ভাস।
খুলনা টাইগার্স,
রংপুর রাইডার্স, সিলেট স্ট্রাইকার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও ফরচুন বরিশাল—পাঁচ দলের কোচ স্থানীয়। খুলনায় তামিম ইকবাল-ইয়াসির
আলী রাব্বিদের নিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে নামবেন খালেদ মাহমুদ সুজন। বিরতি দিয়ে বিপিএলে ফেরা
রংপুর বেছে নিয়েছে দেশের স্বনামধন্য স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে পরিচিত সোহেল ইসলামকে,
যিনি সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগজয়ী শেখ জামালেরও কোচ ছিলেন।
নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি
সিলেট ভরসা রেখেছে সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক রাজিন সালেহের ওপর। সালাউদ্দিন এবারও থাকছেন
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার সঙ্গে। বরিশালের ‘লঞ্চ’ সামলাবেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম। সালাউদ্দিন,
ফাহিম ও সুজন বিপিএলে পুরোনো নাম। সালাউদ্দিনের অধীনে সবচেয়ে বেশি তিনবার চ্যাম্পিয়ন
হয়েছে কুমিল্লা। সুজনেরও শিরোপা জেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তবে বিপিএলের
মতো মঞ্চে প্রধান কোচ হিসেবে এবারই প্রথম সোহেল আর রাজিন সালেহ। স্থানীয় কোচদের জন্য
এটা বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন রাজিন। গতকাল তিনি বলছিলেন, বিপিএল অনেক বড় একটা মঞ্চ স্থানীয়
কোচদের জন্য। এ বছর অনেক দলে দেশি কোচরা আছেন, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। বিপিএল
এমন একটা মঞ্চ, এখানে ভালো কাজ করলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেকোনো জায়গায় কাজ করার আত্মবিশ্বাস
জন্মাবে। অনেক ভালো অভিজ্ঞতা হবে দেশি কোচদের জন্য। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নে যেটা
কাজে দেবে।
বড় সুযোগ পেলেও
কাজটা যে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং, সেটা মানছেন রাজিন, অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। এখানে শুধু
স্থানীয় না, বাইরের অনেক ক্রিকেটারও থাকবে। তাদের পরিচালনা করা, তাদের সঙ্গে মানিয়ে
নেওয়ার কাজ তো চ্যালেঞ্জিংই। চ্যালেঞ্জিং হলেও অনেক কঠিন মনে করি না।
স্থানীয় কোচদের
কাছে এটা কতটা অনুপ্রেরণার, বলছিলেন রংপুরের কোচ সোহেল, অনুপ্রেরণার যেমন, সুযোগও বটে।
ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে শুরু করেছে। আমরাও যে এ ধরনের মঞ্চে দল চালাতে
পারি, তারা বুঝতে পেরেই দায়িত্ব দিয়েছেন। এখানে কাজ করে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
শুধু প্রধান কোচ
নয়, এবার কোচিং স্টাফের বাকি পদগুলোতেও স্থানীয় কোচদের ছড়াছড়ি। সিলেটের কোচিং স্টাফেই
যেমন প্রধান ও ব্যাটিং কোচ রাজিন। সহকারী কোচ বাংলাদেশ দলের সাবেক পেসার নাজমুল ইসলাম,
পেস বোলিং কোচ সৈয়দ রাসেল, স্পিন বোলিং কোচ মুরাদ খান ও ফিল্ডিং কোচের দায়িত্বে থাকবেন
ডলার মাহমুদ ও রাসেল আহমেদ। এবার স্থানীয় কোচদের অপেক্ষা শুধু নিজেদের মেলে ধরার।