করোনা মহামারির কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
একসঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও স্কুল-কলেজ-মাদরাসা কেন আগে খুলছে সেই প্রশ্ন অভিভাবক-শিক্ষকসহ
সংশ্লিষ্ট অনেকের।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের
সতর্ক রেখে ক্লাসে ফিরতে পারলেও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বয়সের তুলনায় নিজেদের কতটা
নিরাপদ রাখতে পারবেন-এ প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচক মহল।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, স্কুল-কলেজ পর্যায়ের
শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে হলে থাকার বিষয়টি যুক্ত নয়। এছাড়া বয়স কম হওয়ায় তাদের টিকা
নেওয়ার বিষয়টিও বাধ্যবাধকতায় পড়ে না। এজন্যই স্কুল-কলেজ আগে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি
অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে
পাঠদান ঈদুল ফিতরের পর ২৪ মে থেকে শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ১৭ মে থেকে
খুলে দেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, হলগুলো খুলে
দেওয়ার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা
করা হবে।
এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়
সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আগামী ৩০ মার্চ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক
স্তরের স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
অর্থাৎ স্কুল-কলেজ খোলার দুই মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
খুলে দিচ্ছে সরকার। তবে পঞ্চম, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানে
আনা হলেও অন্য শ্রেণিগুলোর জন্য প্রতিদিন খোলা থাকবে না স্কুল-কলেজ।
শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, উচ্চমাধ্যমিক
পর্যায়ের দ্বাদশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে দশম এবং প্রাথমিক পর্যায়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের
প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন) ক্লাস হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিকে প্রথম, দ্বিতীয়,
তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস অনুষ্ঠিত
হবে। নবম এবং একাদশ শ্রেণির সপ্তাহে দু’দিন করে ক্লাস
হবে। তারপর পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে একটু একটু করে বাড়িয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় শতভাগ
ক্লাস চালু হবে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর স্কুল-কলেজ খুলতে
যাওয়ার মধ্যে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা কতটা হবে তা নিয়েই প্রশ্ন সমালোচকদের। এ
নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব অনেকেই।
স্কুল আগে খোলা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে
আতঙ্ক দেখা দিয়েছে দাবি করে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির
দুলু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তো টিকা নিয়ে ক্লাসে যাবে। কিন্তু স্কুল-কলেজের
বাচ্চাদের টিকার অনুমোদন নেই।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে উপযোগী
সব শিক্ষক-কর্মচারী এবং অভিভাবকদেরও দুই ডোজ টিকা নিশ্চিত করতে হবে। আর স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়
খোলা হলেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানা হচ্ছে কিনা- তা মনিটর করতে হবে। অন্যথায় আবারও
স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
এ নিয়ে সোমবার (১ মার্চ) মাধ্যমিক ও উচ্চ
শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, স্কুলগুলো হলের সঙ্গে সম্পর্কিত
না। আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এজন্যই স্কুল-কলেজগুলো
আগে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্কুল-কলেজের খোলার প্রস্তুতির জন্য আগে
যেসব নির্দেশনা বা গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে তা পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা অধিপ্তরের
মহাপরিচালক গোলাম ফারুক।
বিশ্ববিদ্যালয়র আগে স্কুল-কলেজ কেন খুলে
দেওয়া হচ্ছে- সেই প্রশ্নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়ের বলেন, এসএসসি
এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এক
বছর তারা ক্লাসরুমে যেতে পারেনি। আর তাদের পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের
জন্য খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, স্কুল-কলেজ খোলা হলেও শিক্ষার্থীদের
প্রতিদিন স্কুলে আসতে হবে না। এই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার অনুমোদন নেই।
আর স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে গত ৮ বছরের মার্চ প্রথম করোনা
রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে বাড়ানোর
পর সেই ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের
পর আরও একমাস বেড়ে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খুলছে ৩০ মার্চ মঙ্গলবার।
তবে শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৩০ মার্চ
খুললেও তার কয়েকদিন পর টানা ছুটি পড়বে। কিন্তু এবার রোজার মধ্যেও ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার
কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
এবছর পবিত্র রমজান, মে দিবস, বুদ্ধ পূর্ণিমা,
শব-ই-কদর, জুমাতুল বিদা ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল থেকে ১৯ মে ৩১ দিন ছুটি থাকবে।
এছাড়া ঈদুল আযহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশে ১৭ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ১২ দিন বন্ধ পাবে
স্কুলগুলো। দুর্গাপূজা, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, লক্ষ্মীপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে
১১ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ দিন বন্ধ থাকবে।
শীতকালীন অবকাশ, বিজয় দিবস, যিশুখ্রিস্টের
জন্মদিন বা বড় দিন উপলক্ষে ১৫ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিন ছুটি থাকবে। রমজান মাসে
ক্লাস চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণারও বিরোধিতা করেছেন অনেক শিক্ষক।