পাবনা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিশ্বমানের সেরা একটি ছাগল। ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু তেমনি চামড়া আন্তজার্তিক উন্নতমানের বলে স্বীকৃত। এছাড়াও ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা অধিক এবং তারা দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী। ব্লাক বেঙ্গল ছাগল প্রধানত গোশত ও চামড়া উৎপাদনকারী জাত হিসেবে বিশ্বে সেরা।
আমাদের দেশে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের গড় ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজি। কখনও কখনও ৩০ থেকে ৩২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ক্ষুদে মাঝারি কিংবা বড় খামারিদের জন্য ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালন বেশি লাভজনক। ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পশ্চিম বাংলা, আসাম ও অন্যান্য রাজ্যে পাওয়া যায়। ব্লাক বেঙ্গল বছরে দুইবার এবং এক সাথে একাধিক বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে। তবে দুধ উৎপাদন ক্ষমতা তুলনামূলক কম। স্ত্রী ছাগল ৯ থেকে ১০ মাস বয়স হলেই প্রজননের যোগ্য হয় এবং ১৪ থেকে ১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে। গোশতের জন্য ব্লাক বেঙ্গল সবচেয়ে ভালো।
ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালনে একদিকে যেমন আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় তেমনি পরিবারের গোশত ও দুধের চাহিদা মেটে। ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের দুধ খুবই পুষ্টিকর। ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালনে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না, এই জাতটির দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটে এবং স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। ব্লাক বেঙ্গল ক্ষেতের আইলে, রাস্তার ধারে, বাড়ির আশপাশের অনাবাদি জায়গার ঘাস লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে। দেশে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের খামারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়িত গ্রামগঞ্জে বাড়ছে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালন। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
ছাগল পালন ও প্রজনন কর্মসূচির আওতায় জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেক মানুষ। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্য তারা খামারে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল লালন পালন করছেন। গ্রামীন দরিদ্রজনগোষ্ঠীর দারিদ্রবিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে ছাগল পালন। দেশে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের খামার করে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন অনেক খামারি তবে পিছেয়ে নেই পাবনার খামারিরাও।
কথা হয় পাবনা সদর গাছপাড়া এলাকার ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের খামারি ফরিদা খাতুনের সাথে তিনি প্রায় ২০ বছর যাবত ছাগল লালন পালন করছেন। বর্তমানে তার খামারে ৮ থেকে ১০ টি ব্লাক বেঙ্গল ছাগল রয়েছে। তিনি জানান, একটি ছাগল বছরে দুইবার এক থেকে একাধিক বাচ্চা দিয়ে থাকে। প্রতি ছাগলের বাচ্চা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন তিনি। ফরিদা খাতুন জানান, একসময় অভাবেই দিন কাটতো তাদের ছাগল লালন পালন করায় ৫ সদস্যর পরিবার নিয়ে এখন ভালো আছেন তিনি।
তেমনি একজন খুশিনা বেগম পাঠা পালন লাভজনক হওয়ায় তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে পাঠা লালন পালন করছেন। তার খামারে দুইটি পাঠা থাকলেও ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় তাকে বিনামূল্যে পিওর ব্লাক বেঙ্গল পাঠা দেওয়ায় তার খামারে এখন পাঠা রয়েছে চারটি। এগুলো পাঠা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকনে তিনি।
কথা হয় পাবনা সদর দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাদিয়ার গ্রামের অঞ্জনা খাতুনের সাথে তার স্বামী পেশায় একজন অটোচালক। পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন। তিনি প্রায় ৫ বছর যাবত ব্লাক বেঙ্গল ছাগল লালন পালন করছেন। অঞ্জনা খাতুন জানান, বছরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি করেন তিনি। ছাগল বিক্রির জমানো টাকা দিয়ে নির্মাণ করছেন সেমিপাকা ঘর সেই সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়ের লেখাপড়া।
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আল মামুন হোসেন মন্ডল এর দেওয়া তথ্য মতে, ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রতি ইউনিয়নে দুইজন করে মোট ১৪৮ জন সুফলভোগীকে বিনামূলো ছাগলের প্লাস্টিকের আধুনিক মাঁচা ঘর নির্মাণ, বিনামূল্যে ভিটামিন, মিনারেল, ছাগলের বাচ্চার দুধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৮ জন সুফলভোগীকে বিনামূল্যে দুইটি করে মোট ৩৬টি পিওর ব্লাক বেঙ্গল পাঠা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও আধুনিক পদ্ধতিতে ছাগল পালনে তাদের একাধিকবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আল মামুন হোসেন মন্ডল বলেন, ব্লাক বেঙ্গল ছাগল প্রতিবছর দুইবার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবার দুই থেকে তিনটি বাচ্চা দিয়ে থাকে। এর মাংস অনেক সুস্বাদু এবং এই ছাগলের রোগ বালাই অনেক কম হয়। ব্লাক বেঙ্গল ছাগল দারিদ্র বিমোচন, নারীর উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।