* প্রকল্পের ৯০ কি.মি কাজ সম্পন্ন
* পাহাড়ি ঢলে মাটি-পাথর সরে ১.৫ কি.মি রেলপথের ক্ষতি
* স্থানীয়দের দাবি অপরিকল্পিত এ প্রকল্পের জন্য ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে
টানা বর্ষণ ও বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে অনেক স্থানে রেললাইন ভেঙে নিচ দিয়ে পানি চলাচল করছে। অনেকস্থানে মাটি ও পাথর সরে গেছে, বেকে গেছে রেললাইন। এতে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা প্রকল্প এলাকা পর্যবেক্ষণ করে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
এবারের ভয়াবহ বন্যায় দোহাজারী–কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে তিন কিলোমিটার রেলপথ ডুবে গেছে। পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ১.৫ কিলোমিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়। সাতকানিয়ার অংশে বান্দরবান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে রেল লাইনের ক্ষতি হয়েছে বেশি। এসব জায়গায় রেল লাইন থেকে সরে গেছে পাথর ও মাটি। রেল লাইনের অনেকস্থানে দুই মাথার সংযোগ স্থলে ক্লিপ ওয়েল্ডিং না করায় বন্যার পানিতে রেল লাইন বাঁকা হয়ে গেছে। মেরামত কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ১ মাসের মতো।
অগ্রাধিকার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্পের অন্যতম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ। আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের (টিএআর) সঙ্গে যুক্ত হতেই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রথম পরিকল্পনা নেয়া হয় এই রেলপথ নির্মাণে। বর্তমানে প্রকল্পটি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নির্মাণাধীন এ রেললাইনের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামে এবার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে। দোহাজারী পরে অংশে রেললাইন প্রকল্পে সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। বর্তমানে এই প্রকল্প নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ না ভেবে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে গেলে ভবিষ্যতে এরকম বন্যা আবার দেখবে দক্ষিণের মানুষ
দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে রেললাইনের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা কিছুদিন পরেই জানা যাবে। রেললাইনের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পানির লেভেল সমান। উজানের পানি নেমে গেলে, আমাদের দোষ দেওয়া যেত, কিন্তু তা হয়নি। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেললাইনে যাতে পানির জন্য বাধা না হয়, সেজন্য রেললাইনে ২০০ কালভার্ট ও সেতু রয়েছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে এই পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার রেল লাইন বসে গেছে। বন্যার পানি কমে গেলে অবশিষ্ট অংশের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ। বান্দরবানের পাহাড়ি পানির স্রোত এসে সাতকানিয়ার কেরানিরহাটের কাছে রেললাইনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। এতে পানির স্রোতে মাটি ও পাথর সরে গেছে। কিছু অংশে রেললাইন হেলে পড়েছে। এ ক্ষতির কারণে প্রকল্প শেষ হতে দেরি হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে রেললাইনের কাজ সম্পন্ন করে ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বন্যার কারণে রেললাইনের কাজ করা যায়নি। এখন পানি কমছে। যেসব স্থানে সমস্যা হয়েছে তা সংস্কার করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ করা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কাজ শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করতে পারবো।
এ প্রকল্পের আওতায় এর মধ্যে কক্সবাজারে আইকনিক ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবশিষ্ট ৮টি স্টেশন ভবন নির্মাণ (দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু) কাজও শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও ৩৯টি মেজর ব্রিজ, ২৮৭টি মাইনর ব্রিজ–কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেবেল ক্রসিং ও একটি আন্ডারপাস, হাতি চলাচলের জন্য ওভারপাস ও থারমাল ইমেজিং ক্যামেরা প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের এই কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার রেললাইন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।