আজঃ মঙ্গলবার ৩০ মে ২০২৩
শিরোনাম

বরিশালে স্মৃতিতে সিনেমা হল

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ মে ২০২৩ | হালনাগাদ:বুধবার ২৪ মে ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
মোঃ মোছাদ্দেক হাওলাদার, বরিশাল প্রতিনিধি

Image

সময়টা ৯০ দশক, তখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন আসেনি। গ্রামের ২/১টি বাড়িতে ছিলো সাদাকালো টেলিভিশন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার প্রায় দিনই ভিড় জমতো গ্রামের ওইসব বাড়ির উঠোনে। তখন বিনোদন প্রিয় মানুষগুলোর কাছে সবচেয়ে বড় বিনোদনেরস্থান ছিলো জেলা ও উপজেলা সদরের সিনেমা হলগুলো।

ওইসময় সিনেমা হলগুলো, ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে নতুন সাজসজ্জায় রঙ্গিন করে সাজানো হতো। ঈদকে সামনে রেখে এক সপ্তাহ আগে থেকেই গ্রামগঞ্জ, পাড়া মহল্লায় সিনেমার পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে যেতো গ্রামীণ জনপদ। ঢাক ঢোল বাজিয়ে মাইকিং করে নতুন ছবির শুভ মুক্তির প্রচার চালানো হতো। দর্শকরা পরিবারসহ সিনেমা দেখতে যেতো নতুন বাংলা ছবি উপভোগ করতে।

গ্রামগঞ্জের হাটবাজারের চায়ের দোকানে দর্শকদের মুখে লেগে থাকতো সিনেমার গল্প। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনীতি ও সিনেমার আলোচনা চলতো সমানে-সমান। কে সমতা বা সুধী আসনে সিনেমা দেখে, কে সৌখিনে বা কে বিলাস আসনে, এসব নিয়েও আলোচনার কমতি ছিলোনা। তখনকার সময়ে ঈদ উৎসবে সিনেমা প্রেমীদের বায়না ছিলো সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাওয়া। প্রচন্ড আবেগ আর ভালোবাসার স্থান ছিল প্রেক্ষাগৃহ। শত শত মানুষ হাসতে হাসতে সিনেমা দেখতে ঢুকতেন প্রেক্ষাগৃহে। কিন্তু সিনেমার দৃশ্যে সিনেমা শেষ হলে অনেকেই কাঁদতে কাঁদতে কিংবা গোমড়া মুখে মন খারাপ করে সিনেমা হল থেকে বের হতেন।

এসব আজ কেবইল স্মৃতি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিতে না পারায় একে একে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অধিকাংশ নামিদামি সিনেমা হলগুলো। তেমনি দর্শক সংকটে ঘুরে দাঁড়াতে না পেরে বিলীন হয়ে গেছে বাকেরগঞ্জের সিনেমা হলগুলো।

বৃহত্তর বরিশালের অধিকাংশ উপজেলা শহরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে একসময়ে দর্শকদের কোলাহলে মুখরিত থাকা সিনেমা হলগুলো। কিছু এলাকায় সিনেমা হলগুলো পরিতক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকলেও অধিকাংশ এলাকায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে সিনেমা হলগুলের ভবনগুলোও ।

একসময়ের অসংখ্য সিনেমা প্রেমী দর্শকরা বলেন, বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ সিনেমা হল আজ বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৫ সালের পর কয়েক বছর ভারতীয় সিনেমার নকল, অশ্লীল চিত্রধারণ, গল্পহীনতা ও সৃষ্টিশীলতা না থাকায় সিনেমা দেখতে আসা দর্শক কমে যায়। এসবের কারণেই মূলত সিনেমা হলগুলো দর্শকশূন্য হয়ে যায়। তাই লোকসান দিতে দিতে একসময় হল মালিকরা সিনেমা হলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।

একাধিক সিনেমা হলের মালিকরা জানিয়েছেন, একটি ছবি রিলিজ হওয়ার পরেই ডিস ক্যাবলে প্রচার হয়। তাই টিকেট কিনে দর্শকরা সিনেমা হলে এসে দেখতে ইচ্ছুক নয়। এছাড়া বর্তমান ডিজিটাল যুগে হাতের মোবাইলে সিনেমা হলের আগেই ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এসব বন্ধ করে এখনও ভালো সিনেমা নির্মিত হলে দর্শকরা আবারও সিনেমা হলে দিকে ফিরে আসবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।

তাদের মতে, সিনেমা শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কারও কোনো মাথাব্যাথা নেই। হচ্ছে না ভালো মানের সিনেমা। এনিয়ে কোনো পরিকল্পনাও দেখা যায় না। তাছাড়া শিল্পী মালিক সমিতির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার হয়ে চলচ্চিত্র জগত আজ ধ্বংসের মুখে। তাই এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চলচ্চিত্র জগতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সঠিক সমাধান করার কোন বিকল্প নেই।

নিউজ ট্যাগ: বরিশাল

আরও খবর