মুমিন জীবনের
শ্রেষ্ঠ উপহার রমজান। আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্ম উন্নয়নের চেতনায় জীবনের
কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের জন্য করুণাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের অফুরান ভান্ডার নিয়ে আসে
রমজান। প্রিয় নবি (সা.) এ মাসকে ‘শাহরুন আজিম’ মহান সম্মানিত মাস এবং ‘শাহরুম মোবারক’ বরকতময়
মাস নামে আখ্যায়িত করেছেন।
কোনো আমল-ইবাদত
বা কোনো কাজ সম্পাদন করার ইচ্ছা বা সংকল্প করাকে নিয়ত বলে। ইসলামি শরিয়তে নিয়তের গুরুত্ব
অপরিসীম।
রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, ১) কোনো ব্যক্তির আমল আল্লাহর কাছে ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয়
না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিয়ত সঠিক হয় না। সুতরাং পবিত্র রমজানের রোজা রাখার ক্ষেত্রেও
নিয়ত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রোজার নিয়ত কীভাবে করব?
নিয়ত এটি আরবি
শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো মনে মনে ইচ্ছা করা। অতএব কেউ যদি সূর্যাস্তের পরবর্তী কোনো
একসময়ে মনে মনে এই ইচ্ছা করে যে, আমি আগামীকাল রমজানের রোজা রাখব, তা হলে তার নিয়ত
সংঘটিত হয়ে যাবে। নিয়ত সহিহ হওয়ার জন্য মুখে উচ্চারণ করা শর্ত নয়। তবে তা উত্তম। (ফাতাওয়া
আলমগিরি-১/১৯৫)
রোজার নিয়ত কখন করব?
সূর্যাস্তের
পর থেকে পূর্ব অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের আগ পর্যন্ত রমজানের
রোজার নিয়ত করার অবকাশ আছে। তবে সুবহে সাদিকের আগেই নিয়ত করে নেওয়া উত্তম। (বাদায়েউস
সানায়ে- ২/২২৯; আল বাহরুর রায়েক-২/২৫৯)
রোজার নিয়তের
জন্য মুখ দিয়ে নির্ধারিত শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করা জরুরি নয়। বরং অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট।
এমনকি রোজার জন্য সেহরি খাওয়াটাও নিয়তের স্থলাভিষিক্ত। কিছু লোক আরবিতে রোজার নিয়ত
করাকে আবশ্যকীয় মনে করে থাকেন অথচ তা সঠিক নয় (জাওয়াহিরুল ফিক্হ ১/৩৭৮)। তবে আরবি নিয়ত
করলে অসুবিধা নেই।
প্রত্যেক রোজার
জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ত করা জরুরি (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৫)। অর্ধ দিনের আগে নিয়ত করলে
রোজা বিশুদ্ধ হয়ে যাবে (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৫)।
আরবিতে : নাওয়াইতু
আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল
মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।
বাংলায় : হে
আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা
পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব, তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত
থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
নিয়ত সম্পর্কিত
জরুরি কিছু মাসয়ালা সবার জেনে রাখা উচিত—রমজানের প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। এক দিনের নিয়ত পুরো রমজানের
রোজার জন্য যথেষ্ট হবে না। (ইলমুল ফিকাহ, ৩/১৮)
রমজানুল মোবারকে
মনে মনে শুধু এটুকু ভাবলেই নিয়ত হয়ে যাবে, আমি আজ রোজা রাখব। (বেহেশতি জেওর, ৩/৩)।