রেলপথনির্ভর জ্বালানি তেল পরিবহন দীর্ঘদিন ছুটির ফাঁদে পড়ায় রংপুর বিভাগে এখনো পেট্রলের চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে ফিলিং স্টেশনগুলো। আবার তেল পরিবহনে রেলের সীমাবদ্ধতা থাকায় ঈদ ঘিরে পেট্রলের বর্ধিত চাহিদার অনুপাতে পাম্পগুলো প্রয়োজনীয় তেল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবহন মালিক ও যাত্রীরা। রংপুর বিভাগীয় পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে ফিলিং স্টেশনের সংখ্যা হচ্ছে ৩৫৪টি। প্রতিদিন পেট্রলের চাহিদা প্রায় ৩ লাখ লিটার। ঈদ ঘিরে এ চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানিগুলো সোমবার পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পেট্রল সরবরাহ করতে পারেনি।
রংপুরের শাপলা ফিলিং স্টেশনের মালিক মো. আজিজুল ইসলাম মিন্টু বলেন, রংপুরে অবস্থিত অয়েল কোম্পানিগুলোয় চাহিদামতো তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে অবস্থিত ডিপো থেকে তেল পাওয়া কঠিন। রোববার কিছু পেট্রল বিক্রি করলেও সোমবার তার পাম্পে পেট্রল নেই। আবার কবে পেট্রল পাবেন তিনি তা জানেন না। একই অবস্থা অধিকাংশ পাম্পে।
পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা তেল কোম্পানিগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলের দুটি র্যাকারের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল পেট্রল, ডিজেল, অকটেন এবং কেরোসিন নিয়ে আসা হয়। চট্টগাম থেকে একটি র্যাকারে তেল নিয়ে আসতে ছয় থেকে সাতদিন সময় লাগে। মেঘনা তেল কোম্পানির সিনিয়র সেলস অফিসার মো. গোলাম ইয়াসিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটি থাকায় তেল এনে বিতরণে বিলম্ব হয়েছে। এদিকে ঈদে পেট্রলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সময়মতো পেট্রল পেতে সময় লাগছে।
এদিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত যমুনা তেল কোম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ১-৫ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকায় জ্বালানি তেল বিতরণে ব্যাঘাত ঘটে। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারণে রংপুরে পাম্পমালিকরা প্রয়োজনে পার্বতীপুর থেকে তেল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে অপারগতা জানান।
রংপুর বিভাগীয় পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাঈদ ফিলিং স্টেশনের প্রোপাইটার মো. রিয়াজ শহিদ শোভন বলেন, যদি এখানে অন্তত রেলের পাঁচটি র্যাকার নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করত তাহলে ঈদের এ চাহিদায়ও পাম্পমালিকদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না বলে তিনি মনে করেন।
রংপুর বিভাগীয় পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, যেকোনো সংকটে একটি অসাধু মহল সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চায়। তাই প্রশাসনের তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, পাশের দেশে জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় সীমান্তসংলগ্ন জেলাগুলো দিয়ে যাতে তেল পাচার না হয় সেজন্য প্রশাসনিক নজরদারি বৃদ্ধি করা দরকার। রংপুর রেলের সুপারিনটেনডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী বলেন, র্যাকার বৃদ্ধির বিষয়টি রেলের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের বিষয়। রেলের ইঞ্জিন সংকটের কারণে র্যাকার বহনে বিলম্ব হয় এ কথা সত্য বলে তিনি জানান।