করোনাভাইরাসের টিকা দুই ডোজ নেয়ার পরও
ইন্দোনেশিয়ায় ডাক্তার-নার্সের মৃত্যুতে চীনের সিনোভ্যাক নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
এমন অবস্থায় ইন্দোনেশিয়ায় স্বাস্থ্য-কর্মীদের বুস্টার (অতিরিক্ত) ডোজ দেওয়ার পরামর্শ
দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জুন পর্যন্ত
৯৪৯ জন স্বাস্থ্য কর্মী মারা গেছেন। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন চিকিৎসক এবং ১০ জন নার্স
করোনায় মারা গেছেন। ইন্দোনেশিয়ার ডাক্তার ও নার্স সমিতি বলছে, মৃতদের সবারই চীনে তৈরি
সিনোভ্যাক টিকা নেয়া ছিল।
এদিকে দেশটিতে বর্তমানে প্রতিদিন ২০ হাজারেরও
বেশি নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এমন অবস্থায় টিকা পেলেও চীনের তৈরি সিনোভ্যাক আসলে
কতটা সুরক্ষা দিতে পারছে বা পারবে তা নিয়ে ইন্দোনেশিয়াতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির একজন ফুসফুস
বিশেষজ্ঞ বলছেন, সিনোভ্যাকের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার এক মাস পর তিনি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা
করে দেখেন কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করার কোনো সুরক্ষাই দেহে তৈরি হয়নি। আরো একমাস পর
দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করেও তিনি একই ফল পান। তবে ঐ চিকিৎসক বলেন, তার কিছু সহকর্মী ভালো
ফল পেয়েছেন, কিন্তু তার শরীরে সিনোভ্যাক টিকা কোনো কাজ করেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি ব্যবহারের
জন্য সিনোভ্যাক টিকা অনুমোদন করেছে। ডব্লিউএইচও সে সময় বলেছিল যে সিনোভ্যাক কোভিডের
বিরুদ্ধে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দেয় বলে পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। আরো বলা
হয়, পরীক্ষায় ১০০ ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সিনোভ্যাক টিকা করোনার বিপজ্জনক উপসর্গ
এবং হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে কাজ করেছে।
চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক কোম্পানি, যারা
এই টিকা তৈরি করছে, দাবি করছে তাদের টিকার ২ ডোজ নিলে করোনার বিপজ্জনক উপসর্গ থেকে
রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে। কোম্পানি বলছে, তৃতীয় ডোজ নেওয়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে এখন ক্লিনিক্যাল
পরীক্ষা চালানো হচ্ছে এবং প্রাথমিক ফলাফল ‘আশাব্যঞ্জক।’
সিনোভ্যাকের প্রধান নির্বাহী ইন উইডং বলেছেন,
দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার তিন থেকে ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ নেয়ার পর দেহে অ্যান্টিবডির শক্তির
মাত্রা ১০ গুণ বেড়ে যেতে পারে, ১৫ দিনের মধ্যে সেই মাত্রা ৩০ গুণ বাড়তে পারে।
এদিকে টিকার তৃতীয় ডেজ বা বুস্টার ডোজ
নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির রোগতত্ত্ববিদ ড. ডিকি বুডিম্যান বলছেন, করোনার
নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের একের পর এক ঢেউ আসছে। ফলে বুস্টার শট খুবই জরুরি। সিনোভ্যাকের
সুরক্ষার মাত্রা বাড়ানো দরকার, বিশেষ করে এখন যেভাবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মত নতুন
ধরণের করোনার প্রকোপ চলছে।
তবে ইন্দোনেশিয়ার এয়ারলাঙ্গা ইউনিভারসিটির
শিক্ষক ড উইধু পুর্নোমো তৃতীয় ডোজ টিকার বিরোধী। তিনি বলেন, এটা ঠিক যে আমরা দেখেছি
পুরোপুরি টিকা নেয়ার পরও বেশ কজন স্বাস্থ্য কর্মী মারা গেছেন যেটা ঘটার কথা ছিল না।
কিন্তু যদি করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সিনোভ্যাক অকার্যকর হয়, তাহলে তৃতীয় ডোজ
টিকা দেওয়াও অর্থহীন।
ইন্দোনেশিয়ার ভ্যাকসিন কর্মসূচি প্রকল্পের মুখপাত্র ড. সিতি সাদি তারমিযি বলেন, বুস্টার ডোজ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তের আগে তারা আরো তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। তৃতীয় ডোজ দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র নেই। ডব্লিউএইচও কিছু বলছে না। সুতরাং আমাদের উচিৎ অপেক্ষা করা।